পর্ব-০৯
____________________
জন্মান্তরবাদ এর অন্যতম প্রধান একটি বিষয় হলো 'চৌরাশির (৮৪) ফের"। ৮৪ এর ফের অর্থাৎ হলো ৮৪ লক্ষ জনম পশু কূলে আসা-যাওয়া করা বিনা হিসেবে। মূলত এই পশুকূলটাই জাহান্নাম বা দোযখ। এখানে অনন্তকাল থাকতে হবে পাপীদের। পরিশেষে তাদের আবারও মানব কূলে আসার সুযোগ দেওয়া হবে পরিশুদ্ধ হওয়ার জন্য। তবে এই ৮৪ লক্ষ জনমে কোন কূলে কতবার আসতে হবে এটা আমরা কেউ জানি না। হতে পারে মানুষের পাপের উপর নির্ভর করবে এটা। মূলত পাপের ওপরই নির্ভর করবে, তবুও হিন্দু ধর্ম গ্রন্থের পুরাণে এটার একটা সংখ্যাতত্ত্ব প্রকাশ পেয়েছে। নিচে আমি হবুহু পুরাণের শ্লোকটি বাংলায় (অনুবাদ) উল্লেখ করতেছি।
"২০ লক্ষ জনম স্থাবর অর্থাৎ কীট-পতঙ্গ ইত্যাদি, ৯ লক্ষ জনম জলজ অর্থাৎ যেসব প্রাণী প্রাণীতে বাস করে (যেমনঃ মাছ, কাকড়া), ৯ লক্ষ জনম কচ্ছপ কূলে, ১০ লক্ষ জনম পক্ষী (পাখি) কূলে (যেমনঃ কাক, ময়না, টিয়া), ৩০ লক্ষ জনম পশু কূলে এবং ৪ লক্ষ জনম বানর থাকার পর মানব জনম প্রাপ্ত হয় এবং কাজ করতে থাকে। এসব যোনী (জনম) ভ্রমন করার পর জীব দ্বীজত্ব অর্জন করে। সবশেষে সব জনম পরিত্যাগপূর্বক ব্রহ্মযোনি প্রাপ্ত হয়।" (বৃহৎ বিষ্ণুপুরাণ)।
তবে হিসেবে এখানে ৮২ লক্ষ জনম দেখা যায়। বাকী ২ লক্ষ জনম নিয়ে কারো কারো ধারনা সেটা মানব কূল। অর্থাৎ একজন মানুষের ভাল বা মন্দ কাজ সমান থাকলে সে ২ লক্ষ জনম ভজন সাধন বা ইবাদতের সুযোগ পাবে। তবে ৪ লক্ষ জনমের কথাই বলা হয় এব্যপারে।
তবে ভিন্ন মতে... ৩০ লক্ষ বার বৃক্ষ যোনি, ৯ লক্ষ বার জলচর রূপে (হাত নেই পা নেই শুধু দেহ আর মাথা), ক্রিমি যোনিতে ১০ লক্ষবার, ১১ লক্ষবার পাখি কূলে, ২০ লক্ষ যোনী পশু কূলে, তারপর মানব কূলেতে ৪ লক্ষবার। মোট কথা ৮৪ লক্ষ জনম আসা-যাওয়া করতে হবে অনন্ত কাল ধরে। যেটাকে বলা হয়েছে অনন্তকালের জাহান্নাম। মূলত কিছুই অনন্তকালের জন্য নয়। কারন চোরের দায়ে বা একজনমের পাপের দায়ে আল্লাহ কখনোই কাউকে অনন্তকাল শাস্তি দিবেন না। একজন বিচক্ষন বিচারকও কাউকে একটা ভুলের শাস্তি পরিমানের চেয়ে বেশি দেন না, সেখানে মহান আল্লাহ তায়ালা কি করে একজনমের পাপের জন্য তাঁর প্রিয় সৃষ্টি মানুষকে অনন্তকালের জাহান্নামের আগুনে নিক্ষেপ করবেন! যিনি কিনা অসীম করুনাময় ও দয়ালু, যার দয়া ও ভালবাসার কাছে সকলের ভালবাসা ও দয়া তুচ্ছ। সুতরাং অনন্তকাল দ্বারা দীর্ঘ একটা সময়কে বুঝানো হয়েছে।
যতটুকু আমার জ্ঞানে বুঝি, তা হলো... মানুষ যতটুকু পাপ করবে সে ততটুকুই শাস্তি পাবে। শাস্তিকে কোনো কম করা হবে না বা বেশিও করা হবে না। যেমন কুরআনে আল্লাহ বলেছেন "যে ব্যক্তি বিন্দু পরিমান ভাল কাজ করবে তাকে তার প্রিতদান দেওয়া হবে এবং যে ব্যক্তি বিন্দু পরিমান খারাপ কাজ করবে তাকেও তার প্রতিদান দেওয়া হবে।" অন্য এক আয়াতে আল্লাহ বলেন "সেদিন কমও করা হবে না আবার বেশিও করা হবে না"। অর্থাৎ কেউ যদি সরিষার বীজ পরিমান ভাল কিংবা মন্দ কর্ম করে, তবে আল্লাহ তার সেই কাজের প্রতিদান অবশ্যই দিবেন।
বিঃদ্রঃ জন্মান্তরবাদ নিয়ে সম্ভাবত আমার বন্ধুদের জানার আগ্রহ মিটে গেছে বা সবার বুঝে এসে গেছে। তাই ৫নং পর্বের পর থেকে আর তেমন সাড়া পাইনি। তাই আর এক পর্ব দিয়েই আমার জন্মান্তরবাদ বিষয়টা শেষ করব অর্থা ১০ নং পর্বেই সমাপ্ত করে দিব। যদিও ২০ পর্ব লেখার ইচ্ছা ছিল। যা ই হোক, ১০ পর্ব পড়লেই সবাই মোটামোটি ধারনা পেয়ে যাবেন।
(পর্ব-১০)
____________________
জন্মান্তরবাদ নিয়ে হয়তো এটাই শেষ পোস্ট। তাই সক্ষেপে কিছু বিষয় তুলে ধরলাম।
*আত্মা অবিনশ্বর। আত্মার ধ্বংস বা ক্ষয় নেই, তেমনি বৃদ্ধিও নেই।
*দেহের নয়, বরং আত্মারই বিচার হবে। তাই ভাল-মন্দের কর্ম্ফল আত্মাই ভোগ করবে।
*আত্মার আহার-নিদ্রা বা বিশ্রাম নেই।
*আত্মা যতক্ষন দেহে থাকে, ততক্ষন আত্মার জন্য দিন এবং এক দেহ থেকে অন্য দেহ ধারন করার পূর্ব মূহূর্ত পর্যন্ত সময় আত্মার জন্য রাত।
*দিন যতটুকু রাতও ততুটুকু। অর্থাৎ দেহে আত্মার যত সময় অবস্থান, তেমনি আবার নতুন দেহ ধারন করতেও ততটুকুই সময় লাগবে (ব্যতিক্রমও হয়)।
*মানুষ যেন ঘুমের ঘরের স্বপ্নের কথা ভুলে যায়, তেমনি আত্মাও নতুন দেহ ধারন করার পর প্রায় সবই ভুলে যায়।
*যারা পূর্ব জন্মের কথা মনে রাখতে পারে তাদের জাতিস্বর বলা হয়।
*আত্মা নারী কিংবা পুরুষ নয়। তাই কর্মও নির্নয় করবে কে কোন লিঙ্গ নিয়ে জন্মগ্রহন করবে।
আর একটা কথা হচ্ছে.. আত্মা আমি নই, বরং আত্মাটা আমার। আত্মা জাতি অংশ। মৃত্যুর সময় দেহের পঞ্চজাত প্রকৃতির পঞ্চজাতের সাথে মিশে যাবে। মাটি মাটির সাথে, পানি পানির সাথে, বাতাস বাতাসের সাথে আর আগুন আগুনের সাথেই মিশে যাবে। সঙ্গে যাবে শুধু সেফাত। সেফাত ৭ টি। তার মধ্যে হাইয়ুন সেফাতের মাঝেই ছয় সেফাত গুপ্ত হবে। মূলত বিচার হবে হাইয়ুন সিফাতের। এই হাইয়ুন সিফাতই 'আমি'। আত্মা আমি নই, বরং আত্মা আমার। মানবের দেহে পাঁচ আত্মা আছে। পরমাত্মা, জীবাত্মা, ধাতু আত্মা, উদ্ভিদ আত্মা, পশু আত্মা। যখন যেই আত্মার প্রভাব বিস্তার করে তখন মানুষ সেরূপ আচরন করে। তাই পশুর মত আচরনও মানুষের মাঝে দেখা যায়।
সবাই ভাবে আত্মাই 'আমি'। আত্মা 'আমি' নই, বরং আত্মা আমার।
বিঃদ্রঃ কেউ কোনো প্রশ্ন বা তর্ক করতে আসবেন না দয়া করে। প্রশ্ন করবেন না এইজন্য যে, জন্মান্তরবাদ দিয়ে আপনাদের জানার আগ্রহ শেষ, তা বুঝা গেছে অনেক আগেই। আর তর্ক করবেন না এইজন্য যে, পোস্ট টা আমার ব্যক্তিগত জ্ঞানের আলোকে, আর আমি বিতর্ক করতে বিরক্তবোধ করি। আমার মতের বিরুদ্ধে কমেন্ট করলেই আনফ্রেন্ড করে দিব তাকে। ভাল লাগলে পোস্ট পড়বেন, ভাল না লাগলে আনফ্রেন্ড ব্লক যা খুশি করবেন, তবুও দয়া করে বিতর্ক করবেন না।