Sunday, December 18, 2016

ফ্রী মেডিটেশন ক্লাশ

সুস্থ্য দেহ, স্থীর মন


মেডিটেশন বা ধ্যান এবং দম সাধনা (শ্বাস-প্রশ্বাসের যোগসাধন) এর প্রতি মানুষের আগ্রহ অনেক। কিন্তু মেডিটেশন সম্পর্কে সঠিক ধারণা না পাওয়ার জন্যে অনেকেই আগ্রহ থাকা সত্তেও ভাল ফলাফল অর্জন করতে পারেন না। বিশেষ করে যারা সূফীবাদী/গুরুবাদী তাদের কাছে ধ্যান ও দম সাধনার গুরুত্ব অনেক বেশি। 


আধ্যাত্মিক উন্নতিই নয়; বরং আধ্যাত্মিক উন্নতির পাশাপাশি শারিরীক উন্নতির জন্যেও দম সাধনার গুরুত্ব অপরিসীম। সুস্থ থাকা, মন ও যৌবনকে স্থীর রাখার জন্য দম সাধনার বিকল্প নেই।


অন্য কোনো মেডিটেশন ক্লাসের সাথে আমাদের এই মেডিটেশন শিক্ষার ক্লাসকে তুলনা করে ভুল করবেন না। আমরা শুধু মাত্র মানব কল্যানের জন্যে কোনো বিনিময় ছাড়াই এই মূল্যবান শিক্ষাটি প্রদান করব সবাইকে।


যে কেউ অংশগ্রহন করতে পারবেন আমাদের এই মেডিটেশন ক্লাসে। তবে অবশ্যই আপনাকে আগে কনফার্ম করতে হবে আমাদেরকে মেসেজের মাধ্যমে অথবা এই পোস্টে কমেন্ট করে।


সন্ধ্যার পর শুরু হবে আমাদের মেডিটেশন ক্লাস এবং চলবে আপনাদের চাহিদা অনুযায়ী। রাতে থাকা ও খাবারের ব্যবস্থা থাকবে দরবার হতে। মেডিটেশন ক্লাস শেষে থাকবে আধ্যাত্মিক ভাব বৈঠক গানের আয়োজন।


আপনারা সবাই আমন্ত্রিত। 


উল্লেখ্যঃ এমন কিছু বিষয় আলোচনা করা হবে দমের সাধনা (শ্বাস প্রশ্বাস নিয়ন্ত্রন) এর ব্যাপারে, যা ইতিঃপূর্বে কোথাও আলোচনা হয়নি।


স্থানঃ-

জালামাচর ছায়েদিয়া পাক দরবার শরীফ।

গ্রামঃ জামালচর।, থানাঃ দোহার।, জেলাঃ ঢাকা।

তারিখঃ ২৯ ডিসেম্বর, রোজ বৃহস্পতিবার। 

সময়ঃ সন্ধ্যা ৬:০০ থেকে রাত ১২:০০


যেভাবে আসবেন:- 

-------------------------

গুলিস্তান হতে দোহারের বাস যমুনায়/নগরে উঠবেন বাঁশতলা নামবেন। নেমে রিক্সা নিয়ে জামালচর দরবার বলবেন। আশাকরি পৌঁছে যাবেন খুব সহজেই।২:৩০ মিনিট লাগবে। বাস ভাড়া ৮০/৯০ টাকা। রিক্সা ২০ টাকা নেবে।

শীতের কাপড় সাথে আনবেন। কোনও টাকা পয়সার প্রয়োজন নেই। নিরাপদে পৌঁছে যাবেন সে আশা রাখছি।

(দূর দূরান্ত থেকে সিলেট চট্রগ্রাম অথবা যে কোন প্রান্ত থেকে যারা আসবেন তারা নিজেদের মত করে একদিন আগে আসলেও কোনো সমস্যা নেই।তারা আমাদের ঘরোয়া মেহমান হিসেবেই থাকতে পারবেন।বিশেষ প্রয়োজনে ফোন দেবেন এই দুটি নম্বরে :

★01919489706

♥ 01935847803.)

Friday, June 3, 2016

জন্মান্তরবাদ(৯-১০)

পর্ব-০৯
____________________
জন্মান্তরবাদ এর অন্যতম প্রধান একটি বিষয় হলো 'চৌরাশির (৮৪) ফের"। ৮৪ এর ফের অর্থাৎ হলো ৮৪ লক্ষ জনম পশু কূলে আসা-যাওয়া করা বিনা হিসেবে। মূলত এই পশুকূলটাই জাহান্নাম বা দোযখ। এখানে অনন্তকাল থাকতে হবে পাপীদের। পরিশেষে তাদের আবারও মানব কূলে আসার সুযোগ দেওয়া হবে পরিশুদ্ধ হওয়ার জন্য। তবে এই ৮৪ লক্ষ জনমে কোন কূলে কতবার আসতে হবে এটা আমরা কেউ জানি না। হতে পারে মানুষের পাপের উপর নির্ভর করবে এটা। মূলত পাপের ওপরই নির্ভর করবে, তবুও হিন্দু ধর্ম গ্রন্থের পুরাণে এটার একটা সংখ্যাতত্ত্ব প্রকাশ পেয়েছে। নিচে আমি হবুহু পুরাণের শ্লোকটি বাংলায় (অনুবাদ) উল্লেখ করতেছি।

"২০ লক্ষ জনম স্থাবর অর্থাৎ কীট-পতঙ্গ ইত্যাদি, ৯ লক্ষ জনম জলজ অর্থাৎ যেসব প্রাণী প্রাণীতে বাস করে (যেমনঃ মাছ, কাকড়া), ৯ লক্ষ জনম কচ্ছপ কূলে, ১০ লক্ষ জনম পক্ষী (পাখি) কূলে (যেমনঃ কাক, ময়না, টিয়া), ৩০ লক্ষ জনম পশু কূলে এবং ৪ লক্ষ জনম বানর থাকার পর মানব জনম প্রাপ্ত হয় এবং কাজ করতে থাকে। এসব যোনী (জনম) ভ্রমন করার পর জীব দ্বীজত্ব অর্জন করে। সবশেষে সব জনম পরিত্যাগপূর্বক ব্রহ্মযোনি প্রাপ্ত হয়।" (বৃহৎ বিষ্ণুপুরাণ)।

তবে হিসেবে এখানে ৮২ লক্ষ জনম দেখা যায়। বাকী ২ লক্ষ জনম নিয়ে কারো কারো ধারনা সেটা মানব কূল। অর্থাৎ একজন মানুষের ভাল বা মন্দ কাজ সমান থাকলে সে ২ লক্ষ জনম ভজন সাধন বা ইবাদতের সুযোগ পাবে। তবে ৪ লক্ষ জনমের কথাই বলা হয় এব্যপারে।

তবে ভিন্ন মতে... ৩০ লক্ষ বার বৃক্ষ যোনি, ৯ লক্ষ বার জলচর রূপে (হাত নেই পা নেই শুধু দেহ আর মাথা), ক্রিমি যোনিতে ১০ লক্ষবার, ১১ লক্ষবার পাখি কূলে, ২০ লক্ষ যোনী পশু কূলে, তারপর মানব কূলেতে ৪ লক্ষবার। মোট কথা ৮৪ লক্ষ জনম আসা-যাওয়া করতে হবে অনন্ত কাল ধরে। যেটাকে বলা হয়েছে অনন্তকালের জাহান্নাম। মূলত কিছুই অনন্তকালের জন্য নয়। কারন চোরের দায়ে বা একজনমের পাপের দায়ে আল্লাহ কখনোই কাউকে অনন্তকাল শাস্তি দিবেন না। একজন বিচক্ষন বিচারকও কাউকে একটা ভুলের শাস্তি পরিমানের চেয়ে বেশি দেন না, সেখানে মহান আল্লাহ তায়ালা কি করে একজনমের পাপের জন্য তাঁর প্রিয় সৃষ্টি মানুষকে অনন্তকালের জাহান্নামের আগুনে নিক্ষেপ করবেন! যিনি কিনা অসীম করুনাময় ও দয়ালু, যার দয়া ও ভালবাসার কাছে সকলের ভালবাসা ও দয়া তুচ্ছ। সুতরাং অনন্তকাল দ্বারা দীর্ঘ একটা সময়কে বুঝানো হয়েছে।

যতটুকু আমার জ্ঞানে বুঝি, তা হলো... মানুষ যতটুকু পাপ করবে সে ততটুকুই শাস্তি পাবে। শাস্তিকে কোনো কম করা হবে না বা বেশিও করা হবে না। যেমন কুরআনে আল্লাহ বলেছেন "যে ব্যক্তি বিন্দু পরিমান ভাল কাজ করবে তাকে তার প্রিতদান দেওয়া হবে এবং যে ব্যক্তি বিন্দু পরিমান খারাপ কাজ করবে তাকেও তার প্রতিদান দেওয়া হবে।" অন্য এক আয়াতে আল্লাহ বলেন "সেদিন কমও করা হবে না আবার বেশিও করা হবে না"। অর্থাৎ কেউ যদি সরিষার বীজ পরিমান ভাল কিংবা মন্দ কর্ম করে, তবে আল্লাহ তার সেই কাজের প্রতিদান অবশ্যই দিবেন।

বিঃদ্রঃ জন্মান্তরবাদ নিয়ে সম্ভাবত আমার বন্ধুদের জানার আগ্রহ মিটে গেছে বা সবার বুঝে এসে গেছে। তাই ৫নং পর্বের পর থেকে আর তেমন সাড়া পাইনি। তাই আর এক পর্ব দিয়েই আমার জন্মান্তরবাদ বিষয়টা শেষ করব অর্থা ১০ নং পর্বেই সমাপ্ত করে দিব। যদিও ২০ পর্ব লেখার ইচ্ছা ছিল। যা ই হোক, ১০ পর্ব পড়লেই সবাই মোটামোটি ধারনা পেয়ে যাবেন।

(পর্ব-১০)
____________________
জন্মান্তরবাদ নিয়ে হয়তো এটাই শেষ পোস্ট। তাই সক্ষেপে কিছু বিষয় তুলে ধরলাম।

*আত্মা অবিনশ্বর। আত্মার ধ্বংস বা ক্ষয় নেই, তেমনি বৃদ্ধিও নেই।
*দেহের নয়, বরং আত্মারই বিচার হবে। তাই ভাল-মন্দের কর্ম্ফল আত্মাই ভোগ করবে।
*আত্মার আহার-নিদ্রা বা বিশ্রাম নেই।
*আত্মা যতক্ষন দেহে থাকে, ততক্ষন আত্মার জন্য দিন এবং এক দেহ থেকে অন্য দেহ ধারন করার পূর্ব মূহূর্ত পর্যন্ত সময় আত্মার জন্য রাত।
*দিন যতটুকু রাতও ততুটুকু। অর্থাৎ দেহে আত্মার যত সময় অবস্থান, তেমনি আবার নতুন দেহ ধারন করতেও ততটুকুই সময় লাগবে (ব্যতিক্রমও হয়)।
*মানুষ যেন ঘুমের ঘরের স্বপ্নের কথা ভুলে যায়, তেমনি আত্মাও নতুন দেহ ধারন করার পর প্রায় সবই ভুলে যায়।
*যারা পূর্ব জন্মের কথা মনে রাখতে পারে তাদের জাতিস্বর বলা হয়।
*আত্মা নারী কিংবা পুরুষ নয়। তাই কর্মও নির্নয় করবে কে কোন লিঙ্গ নিয়ে জন্মগ্রহন করবে।

আর একটা কথা হচ্ছে.. আত্মা আমি নই, বরং আত্মাটা আমার। আত্মা জাতি অংশ। মৃত্যুর সময় দেহের পঞ্চজাত প্রকৃতির পঞ্চজাতের সাথে মিশে যাবে। মাটি মাটির সাথে, পানি পানির সাথে, বাতাস বাতাসের সাথে আর আগুন আগুনের সাথেই মিশে যাবে। সঙ্গে যাবে শুধু সেফাত। সেফাত ৭ টি। তার মধ্যে হাইয়ুন সেফাতের মাঝেই ছয় সেফাত গুপ্ত হবে। মূলত বিচার হবে হাইয়ুন সিফাতের। এই হাইয়ুন সিফাতই 'আমি'। আত্মা আমি নই, বরং আত্মা আমার। মানবের দেহে পাঁচ আত্মা আছে। পরমাত্মা, জীবাত্মা, ধাতু আত্মা, উদ্ভিদ আত্মা, পশু আত্মা। যখন যেই আত্মার প্রভাব বিস্তার করে তখন মানুষ সেরূপ আচরন করে। তাই পশুর মত আচরনও মানুষের মাঝে দেখা যায়।

সবাই ভাবে আত্মাই 'আমি'। আত্মা 'আমি' নই, বরং আত্মা আমার।

বিঃদ্রঃ কেউ কোনো প্রশ্ন বা তর্ক করতে আসবেন না দয়া করে। প্রশ্ন করবেন না এইজন্য যে, জন্মান্তরবাদ দিয়ে আপনাদের জানার আগ্রহ শেষ, তা বুঝা গেছে অনেক আগেই। আর তর্ক করবেন না এইজন্য যে, পোস্ট টা আমার ব্যক্তিগত জ্ঞানের আলোকে, আর আমি বিতর্ক করতে বিরক্তবোধ করি। আমার মতের বিরুদ্ধে কমেন্ট করলেই আনফ্রেন্ড করে দিব তাকে। ভাল লাগলে পোস্ট পড়বেন, ভাল না লাগলে আনফ্রেন্ড ব্লক যা খুশি করবেন, তবুও দয়া করে বিতর্ক করবেন না।

Friday, May 20, 2016

জন্মান্তরবাদ (৭-৮)

পর্ব-০৭
________________
জন্মদিনে মৃত্যুর কথা স্বরন করাই প্রতিটি মানু্ষের মুখ্য কর্ম। জন্ম নিয়ে অমর হওয়ার কর্ম করার জন্যই মানুষের জন্ম। আর অমর হওয়ার কর্মের দ্বারা জন্ম মৃত্যুকে বারণ করে 'নির্বাণ' লাভই হল প্রকৃত মানুষের উদ্দেশ্য। কত শত লক্ষ যোনী ভ্রমনের পর আমরা এই মানব জনম পেয়েছি, তার হিসাব আমাদের কাছে নেই। তাই এই জন্মকেই শেষ জন্ম-মৃত্যু করার লক্ষে আমাদের কর্ম করতে হবে।
জন্ম সেই নেয়, যার পূর্ব জন্মের বাসনা ফুরায় না। মূলত বাসনা থাকতে জীবের আসা-যাওয়া বারণ হবে না। তাই নির্বাণ লাভের সবচেয়ে গুরুত্বপুর্ন বিষয়টি হল বাসনা পরিত্যাগ করা। পাপ এবং পূন্য কর্মের ফলাফল ভোগ করার জন্যই মানুষের বারবার জন্মগ্রহন করতে হয় (জনম নিলে তার মৃত্যু অনিবার্য)।যাকে জন্মান্তর্বাদ বলা হয়।
বাসনা পূরন করার জন্য আমাকে বারবার নয় বাতন ঘুরে এই পৃথিবীতে আসতে হয়েছে দীর্ঘ্য ৯ মাস ১০ দিন মাতৃগর্ভ নামক কবর বা গুর আযাব ভোগ করে। যাকে যঠরের যন্ত্রনা বলা হয় সনাতন বা হিন্দু ধর্মে। প্রতিটি মানুষকেই গুর আযাব ভোগ করতে হয়, হোক সে ওলী আওলিয়া বা নবী রাসূল বা কোনো অবতার। গুর আযাব (যঠরের যন্ত্রনা) কারো জন্য মাফ নাই।
মানুষের কর্ম ৪ প্রকার (পাঁচ প্রকার)। যথাঃ সঞ্চিত, প্রারদ্ধ, নিত্য, আগামী, (পতিসিদ্ধ)।
‪#‎সঞ্চিত‬ কর্মঃ পূর্ব জন্মের কর্ম।
‪#‎প্রারদ্ধঃ‬ পূর্বের কর্ম এই জন্মে প্রারদ্ধ হয়ে আমাদের সাথে এসেছে। যে কর্মের ফল আমরা ভোগ করছি।
‪#‎নিত্য‬ কর্মঃ যে কর্ম আগামী জন্মের জন্য আমরা এখন যা যাযা করছি।
‪#‎আগামী‬ কর্মঃ নিত্য কর্মই আগামী জন্মে প্রারদ্ধ হয়ে আবার আমাদের সাথে যাবে, সেটাই আগামী কর্ম।
(পতিসিদ্ধঃ না জানলেও চলবে)
তাই আমাদের সবার উচিত সঞ্চিত কর্ম প্রারদ্ধ হয়ে আমাদের যে দুঃখ যাতনা দিচ্ছে, তা যেন আগামী জন্মে আর না ঘটে সেই জন্য নিত্য কর্মকে ভাল করতে হবে, যেন আগামী টা সুন্দর হয়।
আজকে আমি ২১ বছর বয়সে পদার্পণ করলাম। আর যারা আমার জন্মদিনে আমাকে wish করেছেন, তাদেরকে জানাই অন্তরের অন্তর স্থল থেকে শুভেচ্ছা ও ভালবাসা। আর যারা জানান নাই, তাদের জন্যও রইলো শুভকামনা। আপনাদের আগামী দিন গুলো সুখের হোক, সেই কামনা রইলো।
গতবার সম্ভাবত ২০০ জনের উপরে Wish করেছিল। কিন্তু এইবার আমি ইচ্ছা করেই আমার জন্ম তারিখ হাইড করে রাখছিলাম যাতে কেউ জানতে না পারে। সত্যি বলতে আমার লাইফে এমন কেউ নাই যেব্যক্তি আমার জন্মদিন মনে রেখে আমাকে উইশ করবে। তাই হাইড করে রাখছিলাম ফেইসবুক থেকে। কিন্তু এইবার Md Anwar Hossain ভাই আমাকে উইশ করছে আমার জন্ম তারিখ মনে রেখে। তারপর সেটা দেখে অনেকেই জানতে পারছে আজ আমার জন্মদিন। । এটা আমার জন্য খুবই আনন্দের। কারন আমি এইরুপ পাওয়ার যোগ্য নই। তবুও আপনাদের মহৎ হৃদয়ের ভালবাসার কাছে আমি চির ঋণী। কারো কাছ থেকে কিছু পাওয়ার আসা ছিল না। তবে কিছু প্রিয় মানুষের অনুপস্থিতিতে একটু খালি খালি লাগতেছে।
তবে সত্যিই Md Anwar Hossain ভাইয়ের ভালবাসার কাছে চির ঋণী। জন্মদিন হাইড করে রাখা সার্থক আমার শুধু আপনার জন্য ভাই। আর তাহিয়া (মেঘ কন্যা) দোস্ত তর কাছেও কৃতজ্ঞ, অন্ততপক্ষে দুইজন মানুষ পেলাম যারা আমার জন্ম তারিখ ডাইরীতে লিখে রাখছে মনে রাখার জন্য। Rezwoan Ahmed ভাই তোমার গীটারের মিউজিক টা অসাধারণ ছিল, Thank u so much bro, Sumaiya Mumtaha তদের দুইজনের যৌথ উইশ সত্যিই অসম্ভব ভাল লাগছে, অসংখ্য ধন্যবাদ তোদের দুইজনকে।
আমি কখনো আমার জন্মদিনে পার্টি করি নাই। ভবিষ্যতে করবো বলেও মনে হয় না। আমি নিজের জন্য এরূপ অনুষ্ঠান পছন্দ করি না। তবে অন্যদের বার্থডে পার্টি আমার খুব ভাল লাগে। আমি অন্যদের সাহায্য ও উৎসাহও দিয়ে থাকি বটে।
দাঁড়ান, দাঁড়ান,, আরেক টা কথা,, নিচের ছবিটা আমার ছোট বেলার। তখন আমার বয়স ছিল মাত্র ২১ দিন। আমি সেই রাহাত।
 পর্ব-০৮
__________________
যীশু খ্রিস্ট বলেছেন, "Every man is a born sinner" অর্থাৎ প্রতিটি মানুষই জন্ম থেকেই পাপী। কিন্তু একটি শিশু জন্মের আগে পাপের বুঝতই বা কি! আর পাপ করলোই বা কখন! নিঃসন্দেহে বাইবেলের এই লাইনটি জন্মান্তরবাদের ইঙ্গিত করে, কিন্তু মুসলিমদের মত খ্রীষ্টানরাও জন্মান্তরবাদ মানতে চায় না। কর্মবাদ ও কর্মের প্রকার গুলো বুঝলেই এই মস্যার সূক্ষ্ম সমাধান পাওয়া যাবে। ৭নং পর্বে কর্মের পপ্রকার উউল্লেখ ককরেছিলাম। আজ আর কর্মের প্রকারভেদ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।

কর্ম প্রধানত চার প্রকার, মোট পাঁচ প্রকার। চার প্রকার কর্ম হলোঃ ১.সঞ্চিত ২.প্রারব্ধ ৩.নিত্য ৪.আগামী। আর পঞ্চম প্রকারের নাম হলো প্রতিষিদ্ধ। 

১.সঞ্চিত কর্মঃ পূর্বের জন্মে মানুষ যে কর্ম করে তাকেই সঞ্চিত কর্ম বলে। অর্থাৎ বর্তমান জন্মে মানুষ সঞ্চিত কর্মেরই ফল ভোগ করে। সঞ্চিত কর্মের উপরই নির্ভর করে মানুষ কেমন স্তরে জন্মগ্রহন করবে। যদি ভাল কর্ম করে তবে ভাল স্তরে, আর যদি খারাপ কর্ম করে তবে খারাপ স্তরে জন্মগ্রহন করবে। পূর্বে জন্মে যে অনেক দান করবে সে ধনী পিতা-মাতার ঘরে জন্ম নিবে হবে, যে কৃপণতা করবে সে দরিদ্র‍্য পিতা-মাতার ঘরে জন্ম গ্রহন করবে। এখানে স্তর রয়েছে, কেউ রাজার ঘরে, কেউ জমিদারের ঘরে, কেউ উচ্চবিত্তের ঘরে, আবার কেউ একদম মিসকীন বা হত দরিদ্রের ঘরে, কেউ বা সামান্য দরিদ্র‍্যের ঘরে, কেউ ভিক্ষারীর ঘরে কেউ বা মধ্যবিত্তের ঘরে জন্মগ্রহন করে। কেউ বা আবার মানব কূল হারিয়ে পশু কূলে জন্মগ্রহন ককরে, যাকে বলা হয় ৮৪ এর ফের।তাই প্রতিটি মানুষই জন্ম থেকেই পাপী, যে ব্যাপারে বাইবেলের উক্তটি তুলে ধরেছিলাম উপরে।

২.প্রারব্ধ কর্মঃ সঞ্চিত কর্মকেই প্রাদব্ধ কর্ম বলা হয় বর্তমান জন্মে। অর্থাৎ আমরা যে কর্মেরফল ভোগ করে তাকেই প্রারব্ধ কর্ম বলে। অর্থাৎ সঞ্চিত কর্মই বর্তমান জন্মে প্রারব্ধ নাম ধারন করে। প্রারব্ধের ভোগ ভুগতে হবেই সে যত বড় মহামানব হোক। কর্ম কখনো পিছু ছাড়বে না। কুরআনের ভাষায় 'যা করবা তার বদলা পাইবা, এক সরিষার দানা পরিমান ছাড় দেওয়া হবে না"।

৩.নিত্য কর্মঃ আমরা বর্তমান জন্মে যেসব কাজ করতেছি সেটাই নিত্য কর্ম। আগামী জন্মে এই কর্মের নাম হয়ে যাবে সঞ্চিত কর্ম ও প্রারব্ধ কর্ম।

৪.আগামী কর্মঃ নিত্য কর্ম যে আমাদের সাথী হবে, যা আগামী জন্মে আমাদের ভোগ করতে হবে, তার নামই আগামী কর্ম। অর্থাৎ আমরা যা করছি বর্তমান জন্মে, তার মধ্যে যা গত হয়ে যাচ্ছে দিন দিন, সেটাকেই এই জন্মে আগামী কর্ম বলা হয়। এই আগামী কর্মই আগামী জন্মে সঞ্চিত কর্ম নাম ধারন করবে।

৫.প্রতিষিদ্ধ কর্মঃ না বুঝলেই চলবে এটা। একটু জটিল। সাধরনত এটা আলোচনায় আসে না। আলোচনা করে পূর্বের গুলো গুলিয়ে যেতেন পারেন।

সুতরাং আমাদের সঞ্চিত কর্ম যা কিনা প্রারব্ধ হয়ে এসেছে আমাদের সাথে, তা আমাদের ভোগ করতেই হবে। তাই আমাদের উচিত নিত্য কর্মটাকে সুন্দর করা, যাতে আগামী কর্মটা ভাল হয়।

Sunday, May 15, 2016

জন্মান্তরবাদ (৫--৬)

পর্ব-০৫
_________________
জন্মান্তরবাদ নিয়ে সবার একই প্রশ্ন... যদি বার বার পৃথিবীতে আসা যাওয়া করতে থাকি, তবে কি কিয়ামত হবে না? কবরের আযাব কি মিথ্যা? হাশর হবে না? পুলসিরাত হবে না? মিজানের পাল্লা হবে না? জান্নাত জাহান্নাম কি নেই?

কিয়ামত দ্বারা সবাই বুঝি এই বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ড ধ্বংস হওয়াকে। কিন্তু এর হাকীকত কি? কিয়ামত এর হাকিকত হল.. মৃত্যুই কিয়ামত। এই দেহ হল বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ড। যা আছে ব্রহ্মান্ডে তা আছে দেহভান্ডে। এই দেহেই রয়েছে চন্দ্র-সূর্য গ্রহ নক্ষত্র। এই দেহেই রয়েছে সাগর পাহাড়। এই দেহেই রয়েছে আরশ কুরসি লৌহ কলম।

কবর দ্বারা সাধারনত বুঝায় মানুষ মারা যাওয়ার পর যে গর্তে তাকে দাফন করা হয়ে, সেটাকেই। কিন্তু হাদিসে করবের আযাবের কথা বলা আছে সত্যি, তবে সেগুলো রূপক অর্থে। কারন অনেক মানুষ আছে, যাদের দাফন করা হয় না। তাহলে তাদের কবরের আযাব কিভাবে হবে? অথচ আল্লাহর রাসূল (স) এর হাদিস থেকে জানা যায় যে, সবারই কবরের আযাব হবে অথবা জান্নাতের বাগান হবে কবর। তবে ত হাদিস মিথ্যা হয়ে যায়। মূলত কবর হলো মাতৃগর্ভ। যেটা অনেক আগেই উল্লেখ করেছি। সবাইকে এই করব বা আলমে বারজাখ অতিক্রম করেই হাসরে উঠতে হবে।

হাসরের মাঠ দ্বারা বুঝায় পরিমানের মাঠ। হাসর মানেই পরিনাম। পৃথিবীই হাসরের মাঠ। আমরা সবাই এখন পরিনামের মাঠেই আছি। পূর্বের জন্মের কর্মফল পাচ্ছি সবাই। ভালর বিনিময়ে ভাল পাচ্ছি, খারাপের বিনিময়ে খারাপ প্রতিদান পাচ্ছি। তাই ত কেউ জন্ম থেকেই অন্ধ, নেংড়া, বোবা হয়, আর কেউ হয় সুদর্শন। কেউ রাজার ঘরে জন্ম নেয়, আর কেউ জন্ম নেয় ভিখারীর ঘরে। কেউ বা আবার পশুকূলে জন্মগ্রহন করে।

মিজান তথা দাঁড়িপাল্লা হল পাপ ও পূন্য পরিমাপের কুদরতী যন্ত্র। যেটার মাধ্যমে মানুষের কৃতকর্ম গুলো পরিমাপ করা হবে। পাপ ও পূন্য ধরা ছুয়া যায় না, এগুলো ত বস্তুই নয়। তবে দাঁড়িপাল্লায় পরিমাপের বিষয়টা নিশ্চয়ই অযৌক্তিক। কিন্তু না! আল্লাহ অযৌক্তিক কিছু বলতেই পারেন না। মিজান এর হাকীকত হল মানুষের বিবেক। বিবেক মানুষকে পাপ ও পূন্যের পরিমাপ করে। এটা কম বেশি বিবেকবান মানুষ সবাই বুঝে। তাই একই কর্মের জন্য কেউ পাপী আবার কেউ পূন্যবান হতে পারে এই বিবেকের কারনে। যার বিবেক যেটাকে পাপ বলবে, সেটা তারজন্য পাপই, আর বিবেক যেটাকে পূন্য বলবে, সেটা পূন্য বা সওয়াব।

জান্নাত ও জাহান্নাম এই দুনিয়ার মাঝেই। তবে প্রকৃত জান্নাত মূলত একটাই। সেটা হল জান্নাতুল ফেরদাউস। যেটাকেই বলা হয় 'নির্বাণ লাভ' বা 'জন্ম-মৃত্যু বারন'। এবিষয় নিয়ে পরে বিস্তারিত লেখার চেষ্টা করব।

 পর্ব-০৬

বৌদ্ধ ধর্মে নির্বাণ

_________________

বৌদ্ধ ধর্ম হচ্ছে সাধনের উপর নির্ভর করে বাসনা থেকে মুক্তির একটা ধর্ম। ইচ্ছেপোষণ করলাম সকল ধর্মের ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে পুনুরুত্থান, জন্মান্তরবাদ এবং নির্বাণ সম্পর্কে লিখব যদিও রাহাত ভাই শুরু করেছেন তাই আমি অন্যদিকটাই তুলে ধরব আশা রাখছি। প্রথমেই বৌদ্ধ ধর্মে নির্বাণ সম্পর্কে লিখব।

মহামতি বুদ্ধ বুদ্ধত্ব লাভ করার পরই বললেন --"হে গৃহকারক আমি তোমাকে জন্ম জন্মান্তর ধরে খুঁজছি কিন্তু তোমার সন্ধান পাইনি।আজ তোমার সন্ধান পেয়েছি। আমি তোমাকে ধ্বংস করেছি। আর তুমি দেহরুপ গৃহকে ধারণ করে আমাকে কষ্ট দিতে পারবেনা। "

বুদ্ধ সেদিন তৃষ্ণার নির্বাণ ঘটিয়েছিলেন। তাই তিনি আর জন্মগ্রহণ করবেন না বলেছিলেন।কর্ম বিমুক্তি হলে তৃষ্ণা বিমুক্তি হয় এবং জন্মনিরোধ হয়। জন্মনিরোধ হলে একত্রিশ লোকভূমির কোন ভূমিতে জন্মগ্রহণ করেনা।জন্ম-মৃত্যু স্বাধীন হয়। দেহ অন্তর জ্বালা শেষ হয়। এটাই হচ্ছে বৌদ্ধ ধর্মের মূল কথা। তাই বলা হয়-নিব্বানং পরম সুখ।

এবার আসি একত্রিশ লোকভূমি কি :--

এক জন্মচক্রাবলে একত্রিশ লোকভূমি থাকে। লোক বলতে জগৎ বা স্থান (realm)।একত্রিশ লোকভূমিতে চার অপায়,একটি মনুষ্যলোক,ছয়টি স্বর্গলোক,ও বিশটি ব্রহ্মলোক। 

চার অপায় হচ্ছে --তীর্যক,অসুর,প্রেত ও নরক। 

তীর্যকলোক :--তীর্যক লোক বলতে মানুষব্যাতীত অন্যপ্রাণী বর্তমান আছে। বাকী তিন অপায়েই মানুষ আছে। এ তীর্যক লোকের আয়ু অনন্ত, অন্যান্য লোকের আয়ু নির্দিষ্ট। এখানে এক প্রাণী আরেক প্রাণীকে বধ করে বিধায় তীর্যক বৃদ্ধিপায়। 

গৌতম বুদ্ধের একটি উদাহরণ দিয়ে শেষ করছি --একটি কচ্ছপ সমুদ্রের নীচ থেকে একশ বছর পর পর সমুদ্রের নীচ থেকে উপরে উঠে একটি যোয়াল দেখতে পেলে যোয়ালের ছিদ্র দিয়ে মাথা ঢোকাতে চেষ্টা করে ঐ যোয়ালের ছিদ্র দিয়ে মাথা ঢোকাতে পারলেই সে কচ্ছপ কুল থেকে মুক্তি পেয়ে অন্য কুলে যেতে পারবে তবে আশা ক্ষীণ।যারা সবসময় রাগ দেখায় ওরা সাপ কুল থেকে জন্মগ্রহণকারী। সকল মানুষ সর্বদা অলসভাবে ঘুমিয়ে কাটায় তারা সরিসৃপ জাতি প্রাণী থেকে মুক্তি পেয়ে মনুষ্যলোকে জন্মগ্রহণ করেছে।এ রকম অসংখ্য উদাহরণ দেয়া যাবে।আর কোন আত্মা যখন মানুষ রুপে আসে যে কুল থেকে আসে সে কুলের স্বভাব কিছুটা হলেও দেখা যায়। 

কয়েকটি তীর্যক প্রাণী :-বানর, বাঘ, ভাল্লুক, সিংহ, হায়না , মাছ ,কুমীর ইত্যাদি। তবে তীর্যক লোক এতটুকুই জানা যথেষ্ট। 

২) অসুর লোক:-যারা পৃথিবীতে সব সময় মারামারি-কাটাকাটি, সন্ত্রাস এবং শক্তি প্রয়োগ করে বেড়ায় তারা অসুর লোক উৎপন্ন করে বা জন্মনেয় সেথা। এখানে একে অপরের আঘাত দ্বারা অসহ্য যন্ত্রণা ভোগ করে। হাত-পা,মাথা কাটা যাওয়ার পর আবার জোড়া লাগে সেখানে। নির্দিষ্ট সময় না হওয়া পর্যন্ত মরেনা। নির্দিষ্ট সময় হলে পরে অসুরলোক চ্যুত হয়ে নানা যোনী বা লোকে উৎপন্ন হয়। এরাই দুনিয়ায় সন্ত্রাসী ও ঝগড়াটে লোক।

৩) প্রেত লোক :-প্রেতরা সর্বদা ক্ষুধার জ্বালায় জ্বলতে থাকে। পোশাক পরিচ্ছদ নোংরা থাকে নর্দমায় এরা পরে থাকে।ইহ জীবনে যারা খাই খাই স্বভাবের, কৃপন,খাবারের প্রতি লোভ, হিংসা,ধর্মীয় এবং শিক্ষাখাতের টাকা আত্মসাৎ করে, দানীয় বস্তু ভোগ করে এরাই প্রেত লোকে উৎপন্ন হয়। যারা মৃত্যুর সময় চর্মসার, কঙ্কাল, ও ক্ষুধার্ত প্রাণীর দৃশ্য বা তালোয়ার দেখে তারা ২২টি প্রেতলোকে কর্ম অনুযায়ী উৎপন্ন হয়।

৪) নরক :- নরক দু:খ যন্ত্রণাদায়ক ও কষ্টকর। আটটি মহানরক আছে। লেখার কলবর বড় হওয়াতে সংক্ষেপে লেখা । প্রত্যেক মহানরকের চারটা কোণ ও দরজা রয়েছে। লোহা দ্বারা নির্মিত। দাউ দাউ করে জ্বলছে। নরকে কোন কোন নারকীদের দেহ ৩ মাইল ৩২০ গজের কম বেশীও আছে।

যারা ব্যাভিচারী,প্রতারক ও কর্কশভাষী, ঘুষ খোর, শিকারী, জীবিত প্রাণী দগ্ধ করে,নেশা করে, অপরকে কষ্ট দেয়,ওজনে কম দেয়,চুরি করে, মিথ্যাবাদী, পুর্ণজন্মে বিশ্বাস করেনা, অন্যের জমি ভোগ করে তারাই নরকবাসী।

৫) ব্রহ্মলোক :-ব্রহ্মলোক ২০ টি। স্বর্গলোকের উপর ব্রহ্মলোক অবস্থিত।যারা ধ্যানী তারা এ লোকে উৎপন্ন হন। এখানে অধ্যানী উৎপন্ন হয়না। কারন ব্রহ্মলোক কাম লোক নয়। কামলোক হচ্ছে স্বর্গ হতে নীচের ভূমিগুলো। ধ্যানের কতগুলো ধাপ আছে বিতর্ক,বিচার,প্রীতি,সুখ ও একাগ্রতা। ধ্যানীরা এই চারটি ধাপ এবং বিদর্শণ ধ্যানের মাধ্যমে যারা অনুগামী ফল লাভ করেন তারা ব্রহ্মলোকে জন্মগ্রহণ করেন। কেউ ৫ বার কেউ ৭ বার।

৬) স্বর্গলোক :-স্বর্গলোক মোট ৬টি। কোনটার আয়ুস্কাল ১২১ কোটি ৬০ লক্ষ বছর, কোনটা ২৩০ কোটি ৬০ লক্ষ বছর আবার কোনটা ৫৭ কোটি ৬০ লক্ষ বছর। এ লোকে কর্ম অনুযায়ী আয়ুস্কাল প্রাপ্ত হয়। বোধি সত্ত্বা গন, তাদের পিতামাতা, মহাপূণ্যবানব্যাক্তি এ স্বর্গে উৎপন্ন হন। দেবতারাই এখানে অবস্থান করেন তবে তারা এখান থেকে সর্বলোকে স্বেচ্ছায় ভ্রমণ এবং জন্মগ্রহণ করেন।

৭) মনুষ্যলোক :--এটা বলার কিছুই নেই এখানে সবাই বর্তমান। যারা পূণ্যবান সত্ত্বা তারা এ ভূমিতে জন্মগ্রহণ করেন। সুদীর্ঘ সময় ধরে চারি অপায়ে পাপ ভোগের পরও এ ভূমিতে জন্মগ্রহণ করে।স্বর্গলোক আর ব্রহ্মলোকের আয়ু শেষ হলেও সত্ত্বগণ এ লোকে জন্মগ্রহণ করে।

নির্বাণ লাভের উপায়:-

-------------------------------

দু:খ নিবৃত্তি তথা জন্ম নিরোধে বৌদ্ধ ধর্মে প্রধান কাজ হচ্ছে প্রতিটি মানুষের শীলময় জীবন গঠন করা। শীল অর্থ চরিত্র। এটাই বৌদ্ধ ধর্মের মূল স্তম্ভ। কয়েক প্রকারের শীলের মধ্যে প্রধান হচ্ছে ---(১) পঞ্চশীল, (২)অষ্টাশীল (৩)দশশীল (৪)২২৭ শীল (৫)৫১০ শীল। এর মধ্যে পঞ্চশীল আর অষ্টাশীল হল গৃহবাসীদের জন্য।

পঞ্চশীল :-১)প্রানী হত্যা থেকে বিরত থাকা ২)চুরি করা থেকে বিরত থাকা ৩)ব্যাভিচার থেকে বিরত থাকা ৪)মিথ্যা কথা বলা থেকে বিরত থাকা ৫)নেশা থেকে বিরত থাকা।

অষ্টাশীল :--১) প্রানী হত্যা থেকে বিরত থাকা ২)পরদ্রব্য হরণ থেকে বিরত থাকা ৩)ব্রহ্মাচার্য পালন করা ৪) মিথ্যা কথা বলা থেকে বিরত থাকা ৫)নেশা থেকে বিরত থাকা। ৬)বিকাল ভোজন (দিনের ১২টা থেকে ভোর ৪ টা পর্যন্ত) হতে বিরত থাকা ৭) নাচ-গান বাদ্য দর্শণ ও শ্রবন সুগন্ধি বিলেপন হতে বিরত থাকা। ৮) উচ্চ শয়ন ও মহাশয়ন হতে বিরত থাকা।

আশাকরি বৌদ্ধ ধর্মের নির্বাণ সম্পর্কে কিছুটা ধারণা দিতে পেরেছি।

লেখকঃ শ্রদ্ধেয় গুরুভাই Md Anwar Hossain

Tuesday, May 10, 2016

জন্মান্তরবাদ (পর্ব ১--৪ পর্যন্ত)

‬ পর্ব-০১
________
জন্মান্তরবাদ অর্থ হল এক জন্ম থেকে অন্য জনম। মৃত্যু বরনের পর আবার জন্ম গ্রহন করা, আবার জন্মের পর মৃত্যু বরন করা, এভাবে বারবার মৃত্যুর পর জন্ম এবং জন্মের পর মৃত্যু বরন করার উপর যে বিশ্বাস ও মতবাদ বা দর্শন রয়েছে, তাকেই জন্মান্তরবাদ বলে।

উল্লেখ্য যে, মৃত্যু হল স্থলদেহ ত্যাগ এবং জন্ম হলো নতুন দেহ গ্রহন। আত্মা অবিনশ্বর। মৃত্যু বলতে শুধুই দেহ থেকে আত্মা বের হয়ে যাওয়াকে বুঝায় এবং জন্ম বলতে সেই বের হয়ে যাওয়া আত্মা আবার নতুন কোনো স্থল দেহ ধারন করে পৃথিবীতে আগমন করাকে বুঝায়। আমরা যেমন দেহ থেকে কাপড় পাল্টাই, আত্মাও তেমন দেহ পাল্টায়। আমরা যেমন ছেঁড়া ও পুরাতন কাপড় ফেলে নতুন কাপড় পরিধান করি, আত্মাও তেমন জরাজীর্ণ দেহ ত্যাগ করে নতুন দেহ গ্রহন করে।

আত্মার এই আসা যাওয়ার কারন হল তার বাসনা ও কর্ম। বাসনা পূরন ও কর্মের ফল ভোগ করার জন্যেই জীব বার বার বিভিন্ন যোনীতে আসা যাওয়া করে। কর্ম ভালও হতে পারে আবার মন্দও হতে পারে। ভাল কর্মের জন্যেও জন্ম গ্রহন করতে হয়, আবার খারাপ কর্মের জন্যেও জন্ম গ্রহন করতে হয়।

খারাপ কর্মের ফল ভোগের জন্য জন্ম গ্রহনটা হয়তো সবাই বুঝে ও মেনে নেয়, কিন্তু ভাল কর্মের ফল ভোগের টা অনেকেইই মানতে চায় না। এর কারন হল জন্ম-মৃত্যু বারন হওয়া বা নির্বান লাভ করা। সবাই এটাই জানে যে ভাল কর্মের ফলেই নির্বান লাভ বা জন্ম-মৃত্যু বারন হয়ে মহামুক্তি লাভ হয়। এটা সত্য যে জন্ম-মৃত্যু বারন হয় উত্তম কর্মের দ্বারাই।

ভাল কর্মের ফল ভোগের জন্যেও কোনী জ্ঞানী জন্ম গ্রহন করার মত ইচ্ছা পোষণ করে না, কারন জঠর ব্যদনা খুব ভয়াবহ, যেটাকে গোড় আযাব বা কবরের আযাব বলা হয়। এই গোড় আযাব থেকে কেউ রক্ষা পায়নি, যাদের জন্মগ্রহন করতে হয়েছে। যেটা হল মাতৃগর্ভের নয় মাস দশ দিন। মাতৃ গর্ভটাই কবর। কেউ কেউ দেহকেই কবর বলেছেন, সেটা তাদের মত, আমাদের মতে মাতৃগর্ভই কবর। (আমি আমার মতের পক্ষে যুক্তি দিয়ে অন্যদের মতকে অবজ্ঞা করতে চাচ্ছি না। তবে যদি প্রয়োজন হয়েই পরে, তবে আগামী পর্বে পাঠকদের চাহিদার উপর বিবেচনা করে লিখব)। এই জঠর যন্ত্রনার জন্যেই কেউ ভাল কর্ম্ফল ভোগের জন্যেই জন্ম গ্রহন করতে চায় না। ভাল কর্মের জন্যে তখন জন্ম গ্রহন করতে হয়, যখন সেখানে বাসনা থাকে। যেমন কেউ ভাবল " আমি খাওয়াইলে আল্লাহ আমাকে উত্তম খাবার দিবে, আমি দান করলে আল্লাহ আমাকে অনেক ধনী বানাবে"। এরূপ ভাবার ফলে আল্লাহ সেই ব্যক্তির বাসনা পূরনের জন্যে তাকে আবার পৃথিবীতে পাঠাবে, তবে আগের চেয়ে উত্তমরূপে। এই বাসনাযুক্ত কর্মের জন্যে সে মূক্তি লাভ করবে না, তবে উন্নত জীবন লাভ করবে। তাই কেউ ধনীর ঘরে জন্ম গ্রহন করে, আবার কেউ গরীবের ঘরে। ভাল কর্ম তখনই মুক্তির কারন হবে যখন তা শুধুই আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য হবে। তাই শাস্ত্রে উল্লেখ আছে যে, বাসনা থাকিতে জীবের আসা-যাওয়া (জন্ম-মৃত্যু) বারণ হবে না।

‬ পর্ব-০২
________

এই পর্বে শুধু জন্মান্তরবাদের প্রমান দেওয়ার চেষ্টা করব কুরআন ও হাদিস থেকে। বাকী পর্ব গুলোতে শুধু জন্মার্বাদের আলোচনা থাকবে। আর কুরআন হাদিস ও বেদ গীতা থেকে উদ্ধিতি ও তার ব্যাখ্যা থাকবে। এই পোস্ট তাদের জন্য, যারা জন্মান্তরবাদ বিশ্বাস করে না ও যারা বিশ্বাস করে; কিন্তু বিশ্বাস দুর্বল।

আল্লাহ তায়ালা বলেন "কিরূপে তোমরা আল্লাহকে অবিশ্বাস করছ? অথচ তোমরা মৃত ছিলে, অতঃপর তিনিই তোমাদেরকে জীবিত করেছেন, পুনরায় তিনি তোমাদেরকে মৃত করবেন এবং পুনরায় তোমাদেরকে জীবিত করা হবে। তারপর তোমারা তাঁরই দিকে প্রত্যাবর্তন করবে।" (Al-Baqara 2:28)

এই আয়াত নিয়ে একটু ভাবুন, আমরা মৃত ছিলাম (জন্মের আগের কথা, জীবত করা হল (জন্ম গ্রহন করলাম), আবার মৃত্যু বরন করব (মানে মরে যাবো), আবার জীবিত হবো (মানে হাসরে উঠবো)। আলেমরা এভাবেই ব্যাখ্যা করে বুঝিয়ে দেয় যে, আমরা মরা ছিলাম, এইবার জন্ম নিলাম, আবার হাসরে উঠবো। কাহিনী শেষ, জন্মান্তরবাদ বলতে কিছুই নেই। কিন্তু একটু লক্ষ করুন, শেষে আল্লাহ বললেন 'তারপর তোমারা তাঁরই দিকে প্রত্যাবর্তন করবে।" প্রত্যাবর্তন অর্থ হল যেখান থেকে আসা, আবার সেখানেই ফিরে যাওয়া। মৃত্যুর পর জীবত হওয়া মানেই প্রত্যাবর্তন নয়। তাই আল্লাহ আগে জীবিত করার কথা বলেছেন, পরে প্রত্যাবর্তন করার কথা বলেছেন। অর্থাৎ আমাদের জীবত করার পর আবার আসতে হবে পৃথিবীতে। কারন আমরা পৃথিবীতেই ছিলাম। তা না হলে আল্লাহ 'প্রত্যাবর্তন' এর কথা উল্লেখ করতেন না।

অপর আয়াতে আল্লাহ বলেন: (হে নবী) তুমি বলঃ তোমাদের (নিরূপিত) শরীকদের মধ্যে এমন কেহ আছে কি যে প্রথমবারও সৃষ্টি করে এবং পুনরাবর্তন করতে পারে? তুমি বলে দাওঃ আল্লাহই প্রথমবারও সৃষ্টি করেন, অতঃপর তিনিই পুনর্বারও সৃষ্টি করছেন বাবা বা, অতএব তোমরা (সত্য হতে) কোথায় ফিরে যাচ্ছ? (Yunus 10:34)

এই আয়াতে দেখা যায় যে, আল্লাহ বললেন তিনিই প্রথমে সৃষ্টি করেছেন এবং তিনিই তা পুনরায় সৃষ্টি করছেন (চলমান) এবং করবেন। (আরবী ভাষায় বর্তমান কাল ও ভবিষ্যতকালের শব্দ একই)। অর্থাৎ আল্লাহ এখনও পুনরায় সৃষ্টি করছেন তার পুরনো ধ্বংস হওয়া সৃষ্টিকে। অর্থাৎ আল্লাহ এখনও মৃতদের জীবত করছেন। কিন্তু মোল্লারা ত বলে যে কিয়ামতের পর জীবিত করবেন এবং হাসরের মাঠে উঠাবেন। এখান থেকেও বুঝা থেকেও বুঝা মানুষের জন্ম ও মৃত্যু হচ্ছে বার বার। যা জন্ম থেকে জন্মান্তর পর্যন্ত চলতেছে।

এইবার অন্য একটি আয়াতের দিকে লক্ষ করুন। আল্লাহ বলেন "তিনিই মৃত হতে জীবন্তের এবং জীবন্ত হতে মৃতের আবির্ভাব ঘটান এবং ভূমির মৃত্যুর পর ওকে পুনরুজ্জীবিত করেন। এভাবেই তোমরা প্রত্যাবর্তন করবে। (Ar-Room 30:19)

এই আয়াতে আল্লাহ বললেন যে তিনি মৃত হতে জীবিত বের করেন এবং জীবিত হতে মৃতকে। এখান থেকেও বুঝা যায় যে জন্মান্তরবাদ সত্য। কারন আল্লাহ আগে এখানে মৃত্যের কথা বলছে, মৃত থেকে তিনি জীবত করেন। তিনি বলেন কি যে, অনস্তিত্ব থেকে তিনি জীবন বের করেন। যেন অন্য আয়াতে আল্লাহ স্পষ্টভাবে বলছেন যে, "তারা কি লক্ষ্য করেনা যে, কিভাবে আল্লাহ সৃষ্টিকে অস্তিত্ব দান করেন? অতঃপর পুনরায় সৃষ্টি করবেন।" (Al-Ankaboot 29:19)। এই আয়াতে অনস্তিত্ব থেকে সৃষ্টির কথা বলে দিয়েছেন। কিন্তু উপরের আয়াতে আল্লাহ মৃতের থেকে জীবনকে বের করার কথা বলেছেন। মানে প্রানী মরার পর আবার জীবন লাভ করবে। আর মৃতকে অস্তিত্বহীন বলা যায় না। যেহেতু আল্লাহ এখানে অস্তিত্ব থেকে প্রান বের করার বা পুনরায় সৃষ্টির কথা উল্লেখ করেছেন, সেহেতু বলাই যায় যে প্রানীর মৃত্যুর পর জীবন ও জীবনের পর আবার মৃত্যু আছে।

অন্য একটি আয়াতে আল্লাহ বলেন' (হে নবী) আপনি বলুনঃ তোমাদেরকে প্রথম যেভাবে সৃষ্টি করা হয়েছে, তোমরা তেমনিভাবে ফিরে আসবে। (Al-Araf 7:29)

এই আয়াত ত একদম স্পষ্ট প্রমান বহন করে যে জন্মান্তরবাদ মহাসত্য। কারন আল্লাহ বলেছেন আমাদের প্রথম যেভাবে সৃষ্টি করা হয়েছে, সেভাবেই আল্লাহর নিকট ফিরে যাবো। এখানে আল্লাহ আদম (আ) এর সৃষ্টির কথা বলেননি, বলেছেন আমাদের সবার কথা, কারন আয়াতে আল্লাহ বহুবচন শব্দ ব্যবহার করেছেন। আল্লাহ ত আমাদের মায়ের গর্ভে রেখে ধাপের ধাপে সৃষ্ট করেছেন তাঁর মহাকুদরতী পদ্ধতিতে। সুতরাং আমাদের প্রত্যাবর্তনও ঠিক এইভাবেই হবে, যেভাবে আমাদের জন্ম হয়েছে পৃথিবীতে। বিষয়টা খুবই সহজ। একটু চিন্তা করলেই বুঝতে পারবেন।

এব্যপারে অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেনঃ “যেভাবে আমি প্রথম সৃষ্টি করেছি সেভাবেই আমি সেটার পুনরাবর্তন ঘটাব”। [সূরা আল-আম্বিয়া: ১০৪]

এই আয়াত থেকেও বুঝা যায় মাতৃগর্ভের মাধ্যমে আবারও জন্মগ্রহন করার কথা। আমাদের আল্লাহ উলঙ্গ করে সৃষ্টি করেছিলেন, আবারও শিশুর বেশে উলঙ্গ হয়েই জন্ম গ্রহন করতে হবে মৃত্যুর পর। এই বিষয়টা আরো পরিস্কার করে দিয়েছেন রাসূল (স)। হযরত আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি মহানবী (সাঃ) কে বলতে শুনেছি যে, "কিয়ামতের দিন মানুষকে উলঙ্গ পদে, উলঙ্গ দেহে ও খাতনাহীন অবস্হায় কবর থেকে হাশরের ময়দানে একত্রিত করা হবে ।" (বোখারী-মুসলিম ।)

উপরে বর্নিত আয়াত যে জন্মান্তরবাদের ব্যপারেই নাজিল হয়েছে, তার প্রমান স্বরুপ অন্য আরেক হাদিসে আছে, নবী করিম (সাঃ) বলেছেন, "কিয়ামতের দিন তোমরা উলঙ্গ পদে, উলঙ্গ দেহে ও খাতনাহীন অবস্হায় হাশরের ময়দানে একত্রিত করা হবে।"একথা বলে তিনি কুরআনের এ আয়াত পাঠ করলেন, 'প্রথমবার সৃষ্টি করার সময় আমি যেরূপ সূচনা করেছি , দ্বিতীয়বারও আমি তাদেরকে অনুরূপভাবে সৃষ্টি করব।'

আল্লাহ মানুষকে তার কর্মের ফল দিবেন। আর তার ফল দেওয়ার জন্যে ত পৃথিবীতেই আসতে হবে এটাই স্বাভাবিক। কারন সূরা যিলযালে আল্লাহ বলেন 'তুমি যা করবা তার বদলা পাইয়া'। অর্থাৎ আমি কাউকে ভালবাসলে ভালবাসা পাবো, আর কাউকে আঘাত করলে আঘাত পাবো। ভালাবাসা পাওয়ার জন্যে ত আমাকেমাকে পৃথিবীতেই আসতে হবে, আর আঘাত পাওয়ার জন্যেও তাই। অবশ্যই থাপ্পরের বিনিময় থাপ্পরই হবে, থাপ্পরের বিনিময়ে আগুন জ্বালানোর কোনো যুক্তিকতাই নাই। আর আল্লাহ ত অবিচারক নন, উনি সর্বোত্তম বিচারক। অবশ্যই তিনি আমাদের থাপ্পরের বিনিময়ে আগুনে জ্বালানোর মত বেইনসাফী করবেন না। আল্লাহ তায়ালা অন্য আয়াতে বলেনঃ "তোমাদের সকলকে তাঁরই দিকে ফিরে যেতে হবে, আল্লাহর ও‘য়াদা সত্য; নিশ্চয়ই তিনিই প্রথমবার সৃষ্টি করেছেন, অতঃপর তিনিই পুনর্বার সৃষ্টি করবেন, যাতে এরূপ লোকদের যারা ঈমান এনেছে এবং ভাল কাজ করেছে তাদেরকে ইনসাফ মত প্রতিফল প্রদান করেন; (Yunus 10:4)

আমাদের সাথে যা ঘটে, তা আমাদেরই কর্মের ফল, কিন্তু একটি শিশু জন্ম থেকেই তবে কেন প্রতিবন্ধি হয়!!! অবশ্যই স্রষ্টা অবিচারক ননন। অনেকেই বলে যে পরীক্ষার জন্য, কিন্তু পরীক্ষা ত সবার একই, তবে প্রশ্ন পত্র কেন ভিন্ন! একেকজনকে কেন একেকভাবে পরীক্ষা নিবেন!!! এটা কোন ধরনের ইনসাফ!!! এথেকেও বুঝা যায় জন্মান্তরবাদ সত্য এবং প্রভু নির্দোষ। উনি শুধু আমাদের কর্মের ফল প্রদান করেন ।যেমন আল্লাহ বলেনঃ 'তোমাদের যে বিপদ-আপদ ঘটে তাতো তোমাদেরই কৃতকর্মের ফল।' (Ash-Shura 42:30)

আবার কেন প্রানী পশু কূলে জন্ম গ্রহন করে মানুষ কেন মানব জনম হারিয়ে পশুকূলে যায়, সেটাও আল্লাহ কুরআনে স্পষ্ট ভাবেই বলে দিয়েছেন সূরা ত্বীনের মধ্যে। আল্লাহ বলেন : "অবশ্যই আমি মানুষকে সৃষ্টি করেছি সর্বোত্তম গঠনে। তারপর আমি তাকে ফিরিয়ে দিয়েছি হীনদের হীনতম রূপে। তবে যারা ঈমান এনেছে এবং সৎকর্ম করেছে, তাদের জন্য রয়েছে নিরবচ্ছিন্ন পুরস্কার। সুতরাং এরপরও কিসে তোমাকে কর্মফল সম্পকের্ অবিশ্বাসী করে তোলে? আল্লাহ কি বিচারকদের শ্রেষ্ঠ বিচারক নন?"
আয়াত জন্মান্তরবাদ এর প্রমান বহন করে। মানুষের কুকর্মের জন্যেই তাকে আল্লাহ পশু কূলে পাঠান। অনেকেই এই আয়াতের ব্যখ্যা বলে যে যারা শনিবারের বিধি-নিষেধ পালন না করে মাছ শিকার করেছিল, তাদের আল্লাহ বানর বানিয়ে দিয়েছিলেন, তাই আল্লাহ এই আয়াত নাজিল করেছেন। কিন্তু এটা মিথ্যাচার। আল্লাহ বানরের ঘটনা কুরআনের অন্য জায়গায় আলোলোচনা করেছেন। আর কুরআন ত সর্বকালের জন্য ও সার্বজনীন। সূরা ত্বীনে আল্লাহ সেসব মানুষের কথাই বলেছেন, যাদেরকে পাপ কর্মের ফলে পশু কূলে স্থানান্তর করেছেন।

পর্ব-৩

------------

আল্লাহ সমস্ত আত্মাকে একসাথে তৈরি করে সারিবদ্ধভাবে দাড় করিয়ে জিজ্ঞাস করলেন "আমি কি তোমাদের প্রভু নই?" (আলাসতু বিররাব্বকিকুম)। উত্তরে আত্মা (রূহ) বলল "না"। অতঃপর তাদের শাস্তি প্রদান করা হল, তারপর আবার পূর্বের ন্যায় জিজ্ঞাস করা হল 'আমি কি তোমাদের প্রভু নই?" এবারও তারা অস্বীকার করল, এভাবে কয়েকবার করা হলে তাদের শাস্তি প্রদানের মাধ্যমে দুর্বল করা হল। তারপর আবার যখন তাদের জিজ্ঞাস করা হল 'আমি কি তোমাদের প্রভু নই?" তখন তারা বলল "হ্যা" (কলু বালা)। আর এই 'হ্যা" সূচক শব্দের স্বীকৃতির প্রদানের প্রমাণ করার জন্যেই প্রানীকূলকে পৃথিবীতে আসতে হল কর্মের মাধ্যমে তা প্রমান করার জন্য। আত্মার সেই জগতকেই 'গঞ্জে মুখ্ফি' বলা হয়। এটাই জন্ম গ্রহনের প্রথম স্ট্যাশন (নয় বাতনের প্রথম পর্যায়)।


আমরা সবাই জন্মের পূর্বে গঞ্জ জাতে গোপন ছিলাম স্রষ্টার সাথে। সেটাই মূলত ব্রহ্মলোক। আবার আমাদের আবার যে কোনো মূল্যে সেখানেই ফিরে যেতে হবে সাধনার দ্বারা। সেখানে পৌঁছাতে পারলে আর আমাদের জন্মমৃত্যু হবে না, তখনই আমাদের জন্মমৃত্যু বারণ হবে, পাবো আমরা জান্নাতুল ফিরদাউস। বৌদ্ধধর্ম মতে যাকে 'নির্বাণ' বলা হয়।


কিন্তু যতদিন আমরা সাধনায় পূর্ন সিদ্ধি লাভ করতে না পারব, ততদিন মৃত্যুর পর ফিরে যেতে হবে 'গঞ্জে মুখফি'তে। এভাবে বার বার আসা যাওয়া করতে হবে আমাদের। যাকে বলা হয় 'অরুজ-নজুল' ভাঙ্গা গড়ার খেলা। অরুজ মানে উপরে যাওয়া আর নুজুল মানে নিন্মে আসা। অরুজ এর নয়টি ধাপ, আবার নুজুলেরও নয়টি ধাপ। নুজুলের ধাপ গুলোকেই 'বাতন' বলা হয়ে থাকে। অর্থাৎ প্রতিটি প্রাণীকে পৃথিবীতে জন্ম নিতে নয়টি স্টেশন ভ্রমণ করে আসতে হয়, ইহাকেই 'নয় বাতন' বলা হয়। এই ধাপ গুলোর ব্যপারের আল্লাহ বলেনঃ "তিনি তোমাদের ক্রমে ক্রমে (পর্যায়ক্রমে বা ধাপে ধাপে) সৃষ্টি করেছেন।" (সূরা নূহঃ ৭১ঃ১৪)।


নয় বাতনের নামগুলো উল্লেখ করা হল সবার জ্ঞাত হওয়ার স্বার্থে। নয় বাতন গুলো হলঃ ১.গঞ্জে মুখফি, ২.জামাদাত, ৩.নাবাদাত, ৪.হায়ানাত, ৫.নুতফা, ৬.আলক্বা, ৭.দায়রা, ৮.জনীন, ৯.তেফেলি।


গঞ্জে মুখফি হল বাতনের প্রথম ধাপ। গঞ্জে মুখফির জগতকেই গঞ্জে জাত বলা হয়। আর বাতনের শেষ ধাপ হলো 'তেফেলি'। হোক সে মানুষ কিংবা অন্য কোনো প্রানী, তাকে এই নয়টি ধাপ অতিক্রম করতেই হবে জন্ম নিতে হলে। 

পর্ব-০৪
__________________
পূর্বের পোস্টে 'নয় বাতন' এর নাম উল্লেখ করেছিলাম। এই পোস্টে আভাসমূলক ব্যাখ্যা দেওয়ার চেষ্টা করলাম।

১.গঞ্জে মুখফি (গঞ্জে জাত বা আলমে আরওয়া বা রূহের জগত)ঃ সমস্ত প্রাণীর আত্মা এখানেই ছিল, আবার এখানেই চলে যাবে মৃত্যুর পর।
২.জামাদাত (অর্থাৎ ধাতু বা জড়)ঃ এটা দ্বিতীয় স্ট্যাশন। গঞ্জে মুখফি হতে কুশাকারে আত্মা পৃথিবীতে নেমে আসে।
৩.নাবাদাত (অর্থাৎ বৃক্ষ)ঃ কুয়াশাকারে নেমে এসে আত্মা কোনো বৃক্ষের উপর পতিত হয়।
৪.হায়ানাত (অর্থাৎ পশু)ঃ এটা চতুর্থ স্ট্যাশন। সেই বৃক্ষ যে পুরুষ প্রানী ভক্ষন করে, আত্মা তাঁর মস্তকে চলে যায় এবং সুপ্ত হয়ে থাকে। 
৫. নোৎফা (অর্থাৎ মণি বা বীর্য)ঃ আত্মা সুপ্ত হয়ে মস্তকে বীর্যের মধ্যে অবস্থান করে। যদি বৃক্ষ বা বৃক্ষের ফল মানুষ খায় তবে আত্মা মানুষের মস্তকে, আর যদি অন্য কোনো প্রাণীতে ভক্ষ করে, তবে আত্মা সেই প্রানীর মস্তকে চলে যায় (বাবার মস্তকে থাকে)।
৬.আলক্বা (অর্থাৎ জমাট বাধা রক্ত বা ঝুলে থাকা)ঃ তারপর বীর্য বাবার মস্তক থেকে মাতৃ রেহেম বা গর্ভাশয়ে নেমে এসে জমাট বাধা রক্তের গঠন ধারন করে। সূরা আলাকে ২য়য় আয়াতে এই বিষয়ে উল্লেখ করেছেন।
৭. জনিন (অপরিনত শেকেল)ঃ মানে অপরিনত দেহ। অর্থাৎ তখন দেহের আকার ধারন করে ঠিকই, কিন্তু পূর্ন হয় না।
৮.দায়রা (অর্থাৎ পূর্ন শেকেল)ঃ সবশেষে দেহ পূর্নতা লাভ করে একটি পূর্ন আকৃতি ধারন করে ২৮০ দিনে। মানে ৯ মাস দশ দিনে। অনেকেই দশ মাস দশ দিনের কথা বলে থাকে, সেটা ভুল তথ্য।
৯. তেফেলি ( এটার অর্থ শিশু। এখানে অর্থ হবে তেলেফি কামেল বা পূর্ন বিকাশ)ঃ অবশেষে প্রানী শিশু আকারে জন্ম গ্রহন করে পৃথিবীতে আসে।

এব্যাপারে মহান আল্লাহ্ বলেন,
ﻓَﺈِﻧَّﺎ ﺧَﻠَﻘْﻨَﺎﻛُﻢْ ﻣِﻦْ ﺗُﺮَﺍﺏٍ ﺛُﻢَّ ﻣِﻦْ ﻧُﻄْﻔَﺔٍ ﺛُﻢَّ ﻣِﻦْ ﻋَﻠَﻘَﺔٍ ﺛُﻢَّ ﻣِﻦْ ﻣُﻀْﻐَﺔٍ ﻣُﺨَﻠَّﻘَﺔٍ ﻭَﻏَﻴْﺮِ ﻣُﺨَﻠَّﻘَﺔٍ ﻟِﻨُﺒَﻴِّﻦَ ﻟَﻜُﻢْ ﻭَﻧُﻘِﺮُّ ﻓِﻲ ﺍﻟْﺄَﺭْﺣَﺎﻡِ ﻣَﺎ ﻧَﺸَﺎﺀُ ﺇِﻟَﻰ ﺃَﺟَﻞٍ ﻣُﺴَﻤًّﻰ ﺛُﻢَّ ﻧُﺨْﺮِﺟُﻜُﻢْ ﻃِﻔْﻼً - ‘
অতঃপর আমরা তোমাদেরকে মাটি থেকে সৃষ্টি করেছি। এরপর বীর্য থেকে (নুফতা), জমাট বাঁধা রক্ত থেকে (আলক্বা) , এরপর পূর্ণ আকৃতি (দায়রা) ও অপূর্ণ আকৃতি বিশিষ্ট গোশতপিন্ড থেকে (জনিন), তোমাদের কাছে ব্যক্ত করার জন্যে। আর আমরা নির্দিষ্ট কালের জন্য মাতৃগর্ভে যা ইচ্ছা রেখে দেই, এরপর শিশু অবস্থায় বের করি (তেফেলি)। (সূরা হজ্জ ২২/৫)।

এভাবে দুনিয়াতে আসার পর আবার ফিরে যেতে হয় সেই গঞ্জমুখফিতে। এভাবেই চলতে থাকে আমাদের আসা যাওয়ার পালা। কিন্তু এই মার্তৃগর্ভের বা জঠরের যন্ত্রতা অনেক ভয়ানক। স্রষ্টার দয়ার ফলে জন্মের পর আমরা সেই যন্ত্রনাকে ভুলে যাই। এটাকেই গূড় বা কবরের আজাব বলে। মূলত মাতৃগর্ভটাই কবব। এই কবরের আজাব থেকে কারো মুক্তি নেই, এমনকি ওলী-আল্লাহ, গাউস কুতুবদেরও না, অবতাররাও এই যন্ত্রনা ভোগ করে মানব কূলে জন্ম নেন। 

তাই সাধনার দ্বারা জন্ম মৃত্যুকে বারণ করে নির্বান লাভের মাধ্যমে ওলী আল্লাহ, সাধু, মনি-ঋষীগন এই কবরের আযাব থেকে চিরমুক্তি লাভ করিতা স্রষ্টার সাথে মিলিত হন। এই স্তরকেই বাকা বিল্লাহর স্তর বলা হয়।

বাসনা থাকতে জীবের এই আসা যাওয়া বারণ হবে না। সে শত কোটি জনম এভাবেই ভ্রমন করতে থাকবে আর জঠরের যন্ত্রনা ভোগ করবে। জন্মমৃত্যু বারনের উপায় একটাই, সেটা হল বাসনাকে বর্জন করা। বাসনাই হল 'কাম'। কাম শুধু যৌনতাই নয়। আমাদের বাসনা থেকে মুক্তি লাভ করতে হবে, তবেই আমরা প্রকৃত মুক্তি লাভ করব। যাকে বলা হয় জন্মমৃত্যু বারণ বা নির্বান লাভ।

আমি সংক্ষেপে আভাস দিলাম, আর যতটা খোলাসা করে বলা সম্ভব সেটাও বললাম। বাকীটা নিজ নিজ গুরু কাছ থেকেই জেনে নিবেন। তবে যতটা প্রকাশ করেছি, এতোটুকুই বুঝে নিতে পারলে কম নয়, বাকীটা আপনি চিন্তা করলে বুঝে যাবেন।

বিঃদ্রঃ আসা যাওয়া শুধু মানব কূলেই নয়, পাপ কর্মের কারনে ৮৪ এর ফেরে পরে গিয়ে পশু কূলেও আসতে হতে পারে।

Saturday, April 9, 2016

সাধনা ও সিদ্ধি

সাধনা’ ও ‘সিদ্ধি’ বস্তু দুটি কি? ইহা আমাদের ভালো করে জেনে নেওয়ার দরকার। প্রথমত ‘সাধনা’ অর্থাৎ অভিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছাইবার জন্য যে পরিশ্রম বা যে কাজগুলো সম্পাদন করা হয়, তাহার নামই হলো ‘সাধনা’। তরীকতের ভাষায় ইহাকে ‘রিয়াযত মুশাহেদা’ বলা হয়। আর ‘সিদ্ধি’ হলো আমি যেই বস্তু লাভের জন্য রিয়াযত করিতেছি, সেই বস্তু পূর্ণভাবে হাসেল করিতে পারা।
এখন আলোচ্য বিষয় হলো, আমরা এই ধারাধামে এসেছি, আবার এই ধরাধাম হইতে চলে যাব। কেনোই-বা এলাম আবার কেনোই-বা চলে যেতে হবে। ভাবলে অবাক লাগে। আমরা ছিলাম কোথায়? এলাম হেথায়, আবার যাব-ই-বা কোথায়? যে দেশে যেতে হবে, সে দেশ কত দূর? সেই দেশের ভাব কি? সেই দেশের মালিক কে? তাঁর সাথে আমার কি সম্বন্ধ? আমি কি নিয়ে এসেছিলাম? আবার কি নিয়ে দেশে ফিরে যাব?
আল্লাহ্ পাক কোরআন মাজিদে বলিয়াছেন, “ওয়া’মা খালাকতুল জ্বিন্না ওয়াল ইন্ছা ইল্লা লি ইয়াবুদুন”। অর্থাৎ ‘আমি জ্বীন আর ইন্ছান বানাইয়াছি শুধুমাত্র আমার এবাদতের জন্য বা দাসত্বের জন্য, আর কিছুর জন্য নয়।’ কোরআন মাজিদে আল্লাহ্ পাক আরও বলেন, “ইয়া আইয়ুহান্ নাফ্সুল মোৎমাইন্নাহ্ ইরজী ইলা রব্বিকা রদিয়াতাম্ র্মাদীয়াহ্”। অর্থাৎ ‘হে নফ্সে মোৎমাইন্না স্বীয় প্রভুর পানে ফিরিয়া যাও। তুমি তাঁহার প্রতি সন্তুষ্ট এবং তাঁহা হইতে সন্তোষ প্রাপ্ত অনন্তর আমার দাসগণের অর্ন্তভূক্ত হও এবং আমার স্বর্গে প্রবেশ কর।’
মূলত এই প্রসঙ্গাটাই হলো সাধনার প্রসঙ্গ। আর একজন আত্মজ্ঞানী হাক্কানী গুরু বা মুর্শিদের সঙ্গ ধরে জানতে হয় যে, আমি কে? আমি কোথায় ছিলাম? আমার দেশ কোথায়? আমি মানবরূপে এই ধরাধামে কেনোই বা এলাম? আবার কেনোই বা চলে যাব? এই আসা যাওয়ার উদ্দেশ্য-ই বা কি? আমার এই আসা যাওয়ার অবসান কবে হবে? আমার মালিক কোরআন নামক চিঠি দিয়ে আমাকে জানাইলেন, আমাকে নাকি এবাদত করিতে পাঠাইয়াছেন। জানতে পারলাম এবাদত অর্থ মালিকের দাসত্ব করা। আমি সেই দাসত্ব কিভাবে আদায় করবো? আমার সেই মালিক কোথায়? তাঁকে আমি কিভাবে কোথায় গিয়া সন্ধান করবো বা তালাশ করবো?
একজন পূর্ণ আত্মজ্ঞানী কামেল মুর্শিদই এই সকল প্রশ্নের জবাব দিতে পারেন এবং ইহার সমাধানের উপায় বাতাইয়া ভক্তকে আত্মজ্ঞানের দ্বারা খোদাকে চিনা জানা করাইয়া ভক্তকে মক্সুদ মঞ্জিলে পৌঁছাইবার জন্য এবাদতের পূর্ণ বিধান বা সাধনার পূর্ণ জ্ঞান দান করিয়া একজন মানবকে আল্লাহ্র পেয়ারা বান্দা বা অলিয়তির দরজায় পৌছাইয়া দিতে পারেন। ইহা কিতাব পড়িয়া কখনো অর্জন করা সম্ভব নয়। এই দুনিয়ার যত বড় আলেম ওলামা হোক না কেন, মুর্শিদ বিহনে কারো পক্ষে আত্মজ্ঞান বা আল্লাহ্র মারিফত হাসেল করা সম্ভব নয়। আর মারিফত বিহনে আল্লাহ্র নৈকট্য লাভ করা সম্ভব নয়। তাই এই দুনিয়াতে পীর বা মুর্শিদের নিকট আত্মসমর্পন ব্যতিত কেহ অলিয়তি প্রাপ্ত হয়েছে, এমন কোনো নজির নাই।
মাওলানা জালালুদ্দিন রুমী (রঃ) বলেছেন, “হরগিজ না শোদ্ মৌলায়ে রুম, তা গোলামে শাম্স তাব্রেজী না শোদ্”। অর্থাৎ ‘আমি কখনোই মৌলায়ে রুম হইতে পারতাম না। যদি আমি হযরত শামস তাবরেজী (রঃ) এর গোলামী স্বীকার না করিতাম।’ আবার ইমামে আজম হযরত আবু হানিফা (রঃ) তিনার কিতাবে বলেছেন, “আমি নোমান ধ্বংস প্রাপ্ত হয়ে যাইতাম, যদি আমি হযরত বাকের (রঃ) এর নিকট আত্মসমর্পন না করিতাম (হযরত আবু হানিফা (রঃ)এর ছোটবেলা হইতে ডাকনাম ছিল নোমান)।” এই দুইটি দলিল না দিলেই নয়, তাই উল্লেখ করিলাম। অতএব পীর বা মুর্শিদের কৃপা বিহনে এই দুনিয়াতে কেউ ওলী হইতে পারবে না এবং পরকাল মুক্তি ও আল্লাহ্র দিদার লাভ করিতে পারবে না। ইহা প্রমানের জন্য অসংখ্য দলিল আমাদের কাছে রয়েছে এবং অসংখ্য ছুফী মতবাদের কিতাবে বহু জ্ঞানীজনেরা অসংখ্য দলিল উল্লেখ করিয়াছেন। আমি শুধু এতটুকুই বলতে চাই, আল্লাহর এবাদত করিয়া আল্লাহকে রাজী খুশি করিতে হইলে একজন আত্মজ্ঞানী কামেল মুর্শিদের আশ্রয় অবশ্যই নিতে হবে। কারণ তিনিই ভক্তের মুক্তির দিশারী। তিনিই বলে দিবেন ভক্তকে মুক্তির সন্ধান।

সেই মুক্তির দেশ কোথায় এবং কতদূর? সে দেশে পৌছাইবার জন্য কয়টি রাস্তা বা কয়টি পথ অতিক্রম করতে হবে? আর কোন পথটি সব চাইতে উত্তম? আর কোন পথে চলিলে আমি সহজে মুক্তির দরজায় পৌছাইতে পারব? আর সেই পথে চলার জন্য আমার কী করণীয়? পথ চলিতে চলিতে যদি কখনো বিপদ আসে তখন আমাকে কে সাহায্য করিবে? আমার মন বড় চঞ্চল। আমার মন যদি আমার সাধনার পথে বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়, তখন আমি কিভাবে আমি আমার মনকে আমার বশে বা অধীন করিতে পারব? কিভাবে আমি বহু দিনের রাস্তা কোন সাধনায় অল্প দিনে পাড়ি দিতে পারবো?
এই সকল তত্ত্ব ও তথ্য একজন জাননেওয়ালা পূর্ণজ্ঞানী গুরু বা হাক্কানী কামেল পীরের নিকট হতে জানা দরকার। তিনিই জানেন তাঁহার কোন ভক্তের জন্য কোন পথটি সহজ এবং উপযোগী। তিনি আরও জানেন কোন সাধনায় বহুদিনের রাস্তা অল্প দিনে পাড়ি দেওয়া যায়। একমাত্র গুরুই ইহা জানেন এবং গুরুই নির্ণয় করবেন যে, তাঁহার কোন ভক্ত কোন সাধনার উপযোগী। একনিষ্ঠ ভাবে প্রত্যেক ভক্তের উচিত তাঁর গুরু তাকে কোন পথে চলার জন্য নির্দেশ করেন, বিনা দ্বিধায় বিনা সংকোচে একাগ্রচিত্তে উহা পালন করা প্রত্যেক ভক্তের অবশ্যই করণীয়। গুরুতে পূর্ণ বিশ্বাস, ভক্তি ও প্রেমের মাধ্যমে তাঁহার সমস্ত আদেশ, উপদেশ একাগ্রচিত্তে পালন করিয়া গুরুর মন জয় করিতে পারলেই দ্বীন বন্ধু দয়াল গুরুর কৃপায় সকল সাধনায় জয় হওয়া সম্ভব।
গুরুকে গোবিন্দ জ্ঞানে না বিশ্বাস করিয়া; বরং ‘গুরুই গোবিন্দ’ ভাবিয়া যে ভক্ত গুরুর সাথে সম্পর্ক স্থাপন করিতে পারিয়াছে, সেই ভক্তের আর কোনো ভয় নাই। গুরু যাহার সহায় হয়েছেন সেই শুধু সাধনায় জয় লাভ করিয়া সিদ্ধি লাভ করিতে সক্ষম হয়েছে। তাই মোজাদ্দাদে আল্ফেছানী (রঃ) বলেছেন, ”পীরে তাস্ত আওয়াল মাবুদ তাস্ত” অর্থাৎ তোমার পীরই তোমার প্রথম মাবুদ। (গ্রন্থঃ মালাওল উলুম)
“সাধনা” নামটি শুনতে ছোট শোনা গেলেও সাধনার বিষয়টি অনেক বড়। সাধনার পথে অনেক বাঁধা এবং পূর্ণ জ্ঞান না থাকিলে সাধনার অবস্থায় সাধনাকারীকে অনেক বড় বড় উত্থান পতনের সম্মুখীন হইতে হয়। সাধনার পথে অনেক ভক্ত বা ছালেকগণ সাধনায় বসিয়া সামান্যতম উন্নতির পথে অগ্রসর হইয়া ঝরাকে শরা জ্ঞান করিয়া অহংকারে মত্ত হইয়া পরে। আবার কেহ কেহ পাগলের প্রলাপের ন্যায় অতি রঞ্জিত কিছু কথা বলিয়া মানুষের মন নিজের দিকে আকৃষ্ট করিবার চেষ্টা করিয়া থাকে। আবার এমন কেহ আছে, সাধনায় বসার পর ছালেক যখন লাওয়ামা হইতে মোল্হেমার দিকে ধাবিত হয় তখন ছালেকের সামনে অনেক মনোরম দৃশ্য উপস্থিত হইতে থাকে। এমন কি অনেক সময় অনেক ওলিদের সাথেও রুহানী ভাবে সাক্ষাত হয়ে যায়। এই অবস্থায় অল্প জ্ঞানী ছালেক মনে করে ‘আমি পেয়ে গেছি বা হইয়া গেছি’। আবার কেউ আকাশে উড়িয়া বেড়ায়। সাধনার প্রথম ধাপে এই ধরনের কিছু আনন্দদায়ক ঘটনা ঘটিতে থাকে। এই জন্য ঐ সকল ছালেকগণ সাধনার পূর্ণ জ্ঞান না থাকার কারণে সাধনার শুরুতে থেমে যায়। তাদের বড় দূর্ভাগ্য। এই অবস্থায় পূর্ণ জ্ঞানী গুরুই হলো একমাত্র উপায়। যাহার গুরু কামেল বা সাধনার সকল ধাপের অবস্থা এবং ব্যবস্থা জানেন, শুধু ঐ গুরুই সেই ভক্তকে ঐ অবস্থা থেকে উন্নত ধাপে পৌঁছাইয়া দিবার ক্ষমতা রাখেন বা আগাইয়া দিতে পারেন। এই জন্য সাধনায় বসার পর ভক্তের কখন কি ভাবের উদয় হয়, তা গুরুকে জানানো দরকার। তখন গুরুই সেই ভক্তের ঐ অবস্থার পরিবর্তন আনিয়া তাহার লক্ষ্য স্থির করিয়া দিবেন। এই ভাবেই গুরুর কৃপায় সিদ্ধি লাভ করা সম্ভব।

সাধনার শুরুতেই প্রত্যেক ভক্তের জীবনে আর একটি কঠিন সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। তাহা হলো ‘মনের চঞ্চলতা’। এই চঞ্চল মন সাধনায় বসিতে চায় না। ‘নফ্স’ নামক শয়তান সর্বদাই মনের পিছনে লেগে থাকে। ধ্যান বা মুরাকাবায় বসলে ছালেকের মনে দুনিয়াবী বিভিন্ন চিন্তা ভাবনা জাগ্রত করে মনকে চঞ্চল করিয়া তুলে। জীবনে কখন কি ঘটেছিল সেই সব স্মৃতি বিজরিত অনেক ঘটনা, অনেক কথা, দুঃখ-বেদনা-সুখ এই ধরনের অনেক দৃশ্য এসে মনকে চঞ্চল করে তুলে। সাধক বারবার মনকে ধ্যানে লাগাইবার চেষ্টা করা স্বত্ত্বেও মন স্থির হয় না। মন লাগামহীন এক পাগলা ঘোড়ার মত দৌড়াইতে থাকে। কখনো এদিক বা কখনো ঐ দিক ছুটাছুটি করতে থাকে। শত বুঝাইলেও মন বুঝ মানে না। কারণ মনের স্বভাবই চঞ্চল।
আমাদের দেহে নফ্সে আম্মারা বলে একটি নফ্স রয়েছে। উহা আমাদের দেহের পাঁচটি নফসের একটি। এই নফ্সটি সাধকের সাধনার পথে সবচাইতে বড় বাধা। এই নফ্সের অধীন ষড়রিপু। এই ষড়রিপুই বিভিন্ন সময় বিভিন্ন রূপ ধারণ করিয়া মনকে নফ্স আম্মারার অধীন করিয়া রাখে। তাই মন সাধকের হওয়া স্বত্বেও নফসের তাবেদারী করে থাকে এবং সাধনাকারীর সাধনায় ধোঁকা দেয়। রিপু সর্বদাই মনকে চঞ্চল করিয়া রাখে। সাধক আল্লাহকে পাওয়ার জন্য বা দেখার জন্য ভাব দরিয়ায় বা ধ্যানে ডুব দিতে পারে না। দুনিয়াকামী মন সাধককে দুনিয়ার দিকে টেনে রাখে। এই অবস্থায় অনেক আশেকী প্রেমিক ভক্ত বা ছালেক নিজেকে অনেক গুনাহ্গার বা অপরাধী বলে ভাবিতে থাকে। আসন ছেড়ে উঠে যায়। পেরেশানীতে কাল যাপন করিতে থাকে। অনেক ভক্ত যাহারা প্রকৃত আশেকান, তাহারা ভাব আবেগে আপন মনে গুণ গুণ সুরে প্রার্থনামূলক গান গাইতে থাকে, আর নিজের মনকে ধীক্কার দেয়। সাধনার প্রথম অবস্থায় সবারই এই একই অবস্থা বা একই দশা। কিন্তু যাহার ভাগ্য ভালো শুধু তাহারই একজন কামেল মুর্শিদ নছিব হইয়েছে। সেই শুধু সাধনার জগতে গুরুর কৃপায় সাধনার শুরু হতে শেষ পর্যন্ত সফলকাম অর্জন করিয়া সিদ্ধির দেশে পৌঁছাইতে পেড়েছে। সে বড় ভাগ্যবান।
বর্তমান দুনিয়ায় ইসলামী ছুফী মতবাদের উপর বিভিন্ন তরীকাভূক্ত অনেক পীর মোশায়েখগণ বিভিন্ন ভাবে পীরগিরী করিতেছেন। কিন্তু দেখা যায় এদের মধ্যে এমনো কতক পীর সাহেবেরা আছেন যে পীরগিরি কি বস্তু তাহাই বুঝে না। আত্ম জ্ঞান তো দূরের কথা, আত্মজ্ঞান যে কি বস্তু তাহাও জানে না। কিছু ফেক্রা কথা শিখে লয়েছে, সেই সব ফেক্রাদারী কিছু কথা বলে মানুষকে মত্ত্ব করে নিজেকে জাহের করে হাক্কানী কামেল পীর রূপে পরিচয় দিয়ে সহজ সরল অনেক আল্লাহ্র আশেকান বান্দাদেরকে মতি ভ্রমিত করিয়া মুরিদ করিতেছে। কথায় বলে “ভাঙ্গা একখান নাও, নাম রাখছে ময়ূরপঙ্খী”। এইসব নৌকাতো ডুববেই এবং যাহারা ঐ সব নৌকার যাত্রী হবে, তাদের কপালেও দুর্গতি অনিবার্য। তাই মাওলানা জালালদ্দিন রুমী (রঃ) বলেছেন, “ভ্রান্ত পীরেরা বিষাক্ত সাপের চাইতেও ভয়ংকর বা বিপদজনক”। দয়াময় আল্লাহ্ পাক যেন ঐসব পীরগণকে হেদায়াত নসীব করেন। আর এদের সহজ সরল মুরিদগণকে যেন আলাহ্ পাক ক্ষমা করিয়া একজন প্রকৃত আল্লাহওয়ালা পীরের নিকট আশ্রয় দান করেন। আমিন।।
আমাদের ছুফী মতবাদের সকল পীর মোশায়েখগণ তিনাদের সকল ভক্তদের এবাদত বন্দেগী করার উদ্দেশ্যে আল্লাহকে রাজি খুশি করার জন্য ও পরকালের মুক্তির উদ্দেশ্যে সকল মুরিদগণকেই যার যার জ্ঞান অনুসারে, ভক্তকে সাধনা ও সিদ্ধি লাভের উদ্দেশ্যে ভক্তদেরকে বিভিন্ন পদ্ধতিতে তপ-জপ, মোরাকাবা মোশাহেদা বা ধ্যান শিক্ষা দিয়ে থাকে। আমরা সবাই মুরিদগণকে বলে থাকি ‘‘হে মুরিদগণ বা ভক্তগণ! তোমরা জিকিরেতে মন লাগাও, ধ্যানে মন লাগাও”, বাস্তবে মন লাগাইতে বললেই কি ধ্যানে মন লাগে!!! ইচ্ছা করলেই কি সবাই ধ্যানে মন লাগাতে পারে?। নিশ্চয়ই সবাই মন লাগাইতে চাইলেও মন এত সহজে লাগে না। যাদের মন চঞ্চল তারা সাধনায় সফল হতে পারে না। তাই অবাধ্য মনকে নিজের বসে আনতে হয়। কোন সাধনার দ্বারা মনকে স্থির করে সাধন পথে ভক্তকে সফলকামী হিসেবে গড়ে তুলা যায়, ইহা গুরুর দায়িত্ব। ভক্তকে সাধনায় বসাইবার আগে কিভাবে মন বসে আনা যায় সেই সাধনা শিক্ষা দিয়া তারপর সিদ্ধি লাভের জন্য সাধনায় বসাইতে হয়। ইহা হল পীরগীরি বা গুরুগীরির প্রধান বৈশিষ্ট্য। এই বৈশিষ্ট্য হল কামেল পীরের প্রধান লক্ষন। তত্ত্ব জানলেই পীর হওয়া যায় না। তত্ত্ব জ্ঞান হল ভক্তের ঈমান মজবুত করার জন্য। আর সাধনা হল সিদ্ধি লাভের জন্য। আশাকরি জ্ঞানীজন আমার এই অল্প কয়েকটি কথার দ্বারা বুঝতে পেরেছেন। মূলত মনকে বসে আনিতে পারা বা মনকে বাধ্য করিতে পারাই হল সাধনার জগতের মূল সাধনা, এটা আমি মনেকরি। এই মন কোন সাধনা দ্বারা বশে আনা যায় এবং মন বশে আসিলে এই মন সাধনাকারীকে কেমন ভাবে সাহায্য করে, কতদূর পর্যন্ত সাহায্য করিতে পারে, এখন আমি সেই ব্যাপারে মোটামোটি একটা ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করব।

চিত্তের প্রবৃত্তিকে নিবৃত করার নাম হল প্রধান সাধনা’। মন বসে আসিলে সর্ব সাধনায় সিদ্ধি লাভ হয়। এই মনকে বশে আনার জন্য বিভিন্ন ধর্মের সাধু-গুরু-বৈষ্ণব, মনি-ঋষি, অলি-আল্লাহ, গাউছ-কুতুব বা আল্লাহর ফকিরগণ বিভিন্ন পদ্ধতি বলে গেছেন। আমার অভিজ্ঞতার আলোকে আমার মতে যাহা সর্বশ্রেষ্ঠ মনে হইয়াছে আমি উহাই এই কিতাবে বলিতে বা বুঝাইতে চেষ্টা করিতেছি। উহা হল “দমের সাধনা”।
এই দমের সাধনাকে যোগী মনি ঋষিগণ “প্রাণায়াম” নামে আখ্যায়িত করে গেছেন। আবার এই প্রানায়ামকে আবার কয়েক ভাগে ভাগ করিয়া কার্য অনুসারে কয়েকটি নাম দেওয়া হয়েছে। যেমনঃ-
১। কুম্ভুক প্রানায়াম। ২। অলোলোম বিলোম প্রানায়াম।
৩। কাপিল ভাতি প্রানায়াম। ৪। ভুহ্ম্রা প্রাণায়াম ইত্যাদি।
এইগুলো সবই দমের সাধন। আমি মনে করি, এই সব দমের সাধনাই হল সর্বশ্রেষ্ঠ সাধনা। এই সাধনার দ্বারা সাধক বহু জন্মের সাধনার ফল এক জন্মেই লাভ করিয়া জন্ম আর মৃত্যুকে জয় করিতে সক্ষম হন। এই মাটির মানুষ আল্লাহর শক্তিতে শক্তিমান হয়ে বাকাবিল্লাহ্র ওলি বা গাউছ কুতুবগণের দরজায় পৌছায়তে পারেন। ইহা আমার ধারণা , অন্যদের ধারনা বলিতে পারি না। যাই হোক, আমার অভিজ্ঞতার আলোকে যাহাই বলতেছি বা লেখতেছি ইহা অব্যর্থ। এই জ্ঞান অর্জন করিয়া পরীক্ষা করিলে বুঝতে পারিবেন যে, দমের সাধনার কত শক্তি। এই দমের সাধনাকে আল্লাহ্র অলি, ফকিরগণ ‘পাঁছ আনফাছের সাধনা’ নামে আখ্যায়িত করেছেন।
মনকে বশে আনার জন্য দমের সাধনা বা ‘পাঁছ আনফাছের সাধনা’ই হল প্রধান সাধনা বা প্রধান উপায়। তবে দমের সাধনার মধ্যে ‘কুম্ভুক’ হল সর্বশ্রেষ্ঠ। আর কুম্ভুক প্রাণায়ামকে আবার দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে। যথাঃ
১। অন্তঃর কুম্ভুক। ২। বহিঃর কুম্ভুক।
এই ‘কুম্ভুক’ সাধনা আপন গুরুর কাছে থেকে শিক্ষা লাভ করতে হয়। ইহার নিয়ম বা বিধান রয়েছে। সেই নিয়ম বিধান ছাড়া কেউ যদি এই সাধনা করে, তবে সাধনাকারীর ঐ সাধনায় কোনো ফল পাবে না। বরং হিতে বিপরীত হতে পারে। এর জন্য একজন পূর্ণজ্ঞানী কামেল মুর্শিদের আশ্রয় নিতে হবে।
আমি ইতিপূর্বে পীর সম্পর্কে কয়েকটি কথা বলেছি। হয়তো এধরনের পীর সাহেবরা আমার এই কিতাবটি পড়িয়া অনেক রাগ হয়ে যাবেন। আমি কিন্তু কাউকে ছোট করার জন্য এই কথাগুলো লেখি নাই। বাস্তবে পীর সম্বন্ধে আমি যাহা বলেছি বা লেখেছি, তার কারণ হল কোনো লোকই যেন পীরগিরীর পূর্ণ আত্মজ্ঞান আর সাধনার জ্ঞান অর্জন না করিয়া পীরগিরী করার জন্য লালায়িত না হয়। দুনিয়ার সহজ-সরল আল্লাহ্র আশেকান বান্দারা যেন ধোকা প্রাপ্ত না হন। তাহারা যেন সত্যিকারের একজন কামেল মুর্শিদের নিকট পৌঁছাতে পারেন এবং দয়াল গুরুর কৃপা লাভ করিয়া সাধনা ও সিদ্ধির দেশে পৌছাইতে পারেন। দয়াময় আল্লাহ্র সান্নিধ্য লাভ করিয়া এই মানব জনম সার্থক করিতে পারেন। ধোঁকাবাজীর দরবারে গিয়ে কেউ কোনো দিন আল্লাহ্ প্রাপ্তি হতে পারে না। আমার দ্বীনের নবী বলেছেন যে, “আল হাক্কু কররুন”- অর্থাৎ ‘‘হক কথা তিতা বা করা শুনা যায়”।
আমি এখন আবার পুনরায় পূর্বের কথায় ফিরে আসি। দমের সাধনাই হলো মনকে বশে আনার প্রধান সাধনা বা উপায়। দমের সাধনা দ্বারা মনকে বস করা যায়; শুধু তাই নয়, এই দমের ঘর আল্লাহ্র ফকিরদের ‘ফকিরী ঘর’। এই দমের ঘরে প্রবেশ করিয়া ফকিরগণ ফকিরী করিয়া এই দুনিয়ার অনেক আগুম-নিগুম সম্বন্ধে অগ্রিম খবরও জানতে পারেন। মোট কথা, এই দমের ঘরে প্রবেশ করিয়া শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে আল্লাহ্র প্রেমিক সাধকগণ ফকিরী করিতেছেন।

এই দম বা শ্বাস প্রশ্বাসের দ্বারা কুদরতময় মহান আল্লাহ্ পাক এক বিশাল আজব কুদরতী ঘর নির্মাণ করিয়াছেন। ইহা পূর্ণ জ্ঞানী আরেফ বিল্লাহ্ ফকির যাহারা, তাঁহারাই বুঝতে পেরেছেন। এই মানব রূপী দেহ ঘরটি আল্লাহ্র শ্রেষ্ঠতম সৃষ্টি। যাহা আছে এই ব্রোহ্মান্ডে, তাহা আছে এই মানব দেহ ভান্ডে। এই দেহ ভান্ডে দিবা রাত্রী ২৪ ঘন্টার মাঝে ১২ বার দিন আর ১২ বার রাত তথা চন্দ্র-সুর্য, গ্রহ-নক্ষত্র উদয় অস্তিমিত হইতেছে। অর্থাৎ ১২ বার রবি-শষী উদয় আর অস্তিমিত হইতেছে। প্রতি মুহুর্তে ১২ বারুজ ৭ সেতারার অনন্ত অসীমের এক আজব খেলা চলিতেছে। এই খেলা প্রত্যেকটি মানবদেহে সংগঠিত হইতেছে। যাঁহারা পূর্ণ আত্মজ্ঞানী আরেফ বিল্লাহ্, তাঁহারা আল্লাহ্র এই সব নিগুম খেলা দেখতে দেখতে এক মহা আনন্দের সাগরে ভাসিয়া বেড়াইতেছেন। ইহা দুনিয়াদার মানুষের উপলব্ধি করার ক্ষমতা নাই। মানবের এই দেহ এক অনন্ত রহস্য ভান্ডার। এইসব রহস্যের মধ্যে ‘দমের ঘর বা পাছ আনফাছ’এর রহস্যটাই হল সব চাইতে গভীর রহস্যপূর্ণ। এই দমের ঘরেই ‘সুলতান নাছিরা’ পথে পাছ আনফাসের সাথে আল্লাহ্ ও আদম আর দ্বীনের নবী সর্বক্ষণ আসা যাওয়া করেন। এই দমের ঘরেই আহাদি, আহ্ম্মাদি আর মোহাম্মাদি শক্তি দ্বারা সমস্ত প্রাণী জগত জীবিত এবং পরিচালিত হইতেছে। এই জগৎময় সর্ব চীজে সর্ব ভুতে আমার ঐ আল্লাহ্ পাকের কুদরতী শক্তি দ্বারা নিয়ন্ত্রীত ও পরিচালিত হইতেছে। প্রকাশ্যে এবং অপ্রকাশ্যে সর্ব কিছুর মূলে রহিয়াছে আমার ঐ আল্লাহ পাকের কুদরতী এক নিগূম খেলা। আরিফ বিল্লাহ্ ছাড়া ইহা অন্য কেহ বুঝিতে পারে না। উলুহিয়াত দরিয়ার মাঝে খোদার নিজ কুদরতে রূবুবিয়াত রূপে এক অনন্ত তরঙ্গ রাশির যোগ মিলনে তথায় হু-হু-হু এর অনাবিল এক শান্তির ধ্বনি উচ্চারিত হইতেছে। ঐ ধ্বনি আরেফ বিল্লাহ্গণ নিজ নিজ কর্ণে শ্রবণ করিতে করিতে ভাব আবেগে বিভোর হয়ে খোদার অনন্ত কুদরতময় আবুদিয়াত নামক ভাঙ্গা গড়ার খেলার কৌশল দেখিতে দেখিতে রিপু এবং ইন্দ্রীয় ভিত্তিক আনন্দ পরিত্যাগ করিয়া এক অনন্ত অনাবিল আনন্দের সাগরে ডুব দিয়া অনেক সময়ের জন্য সমাধি প্রাপ্ত হইতেছেন। আর এই হু-হু-হু এর ধ্বনিকে আরেফ বিল্লাহ্দের ভাষায় ‘আন্হাদ-নাদ’ বলা হয়। এই ধ্বনিকে যোগী মনি-ঋষীগণ ‘ঔঁ-কার নাদ’ বলিয়া আখ্যা দিয়েছেন। কৃষ্ণ ভক্তরা ঐ শব্দকে ত্রিবেনীর ঘাটে কৃষ্ণের ভাবের বাঁশির মধুর ধ্বনি বলিয়া থাকে। উহা এক অনন্ত মধুর সুর। ঐ সুর বা ধ্বনিতে যে আনন্দ লুকাইয়া রহিয়াছে সেই আনন্দকে ব্রহ্মানন্দ বলিয়া যোগী মণি-ঋষীগণ আখ্যায়িত করেছেন। ব্রহ্মানন্দ হল যে আনন্দের কথা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না, শুধু সেই বুঝেছে যেজন ঐ আনন্দের দেশে পৌঁছাইয়াছেন।
একজন আত্মজ্ঞানী হাক্কানী কামেল মুর্শিদ তিনার ভক্তকে আত্মজ্ঞান দান করিয়া দমের সাধনা শিক্ষা দিয়া ত্রিবেনীর ঘাটে খাড়া করে ঐ আনহাদ-নাদ শুনাইয়া আল্লাহ্র মহাব্বতে সমাধিস্ত হওয়ার পদ্ধতি বা সাধনা শিক্ষা দিয়া ভক্তকে ওলীর দরজায় পৌছাইয়া দিতে পারেন। যদি দ্বীনবন্ধু দয়াল গুরু কৃপা করেন। একজন ছালেক দমের সাধনা দ্বারা মনকে বশে আনিয়া সকল সাধনায় জয় করে সিদ্ধি লাভ করতে পারে। আর যদি মনকে বশ না করতে পারে, তাহলে সেই ব্যাক্তি যতই সাধনা করার চেষ্টা করুক না কেন নিশ্চয়ই সে ব্যর্থ হবে, তাহার সিদ্ধি লাভ করা সম্ভব হবে না। তাহার এই দুর্লভ মানব জীবন ব্যর্থ হবে। তাই আমি মনে করি, আল্লাহ্র দিদার লাভ করিতে চাইলে বা সাধনায় সিদ্ধি লাভ করিতে চাইলে প্রথমেই মনকে নিজের বশে আনতে হবে তারপর মনকে সাধনার সঙ্গী বানায়ে মনের সহযোগিতায় সাধনায় বসে সিদ্ধির দেশে প্রবেশ করিতে হবে। তাই আমি মনে করি, প্রত্যেক আশেকানের উচিত দমের সাধন শিক্ষা লাভ করিয়া আগে মনকে নিজের বশে আনা দরকার, তারপর ধ্যান বা মোরাকাবা-মোশাহেদায় প্রবেশ করিয়া সিদ্ধি লাভ করা সম্ভব। তা না হলে ভজন সাধন ব্যর্থ হবে। এটি আমার মতামত, অন্যেরা কি ভাবে সেটা তাদের ব্যাপার।
এখন আমি দমের সাধনা বা পাছ আনফাসের সাধনার সার্থকতা সম্পর্কে আরো কিছু আলোচনা করব। যাহা অনেক কিতাবে অনেক জ্ঞানীগণ আলোচনা করেন নাই বা লেখেন নাই। আমি এই জন্য আলোচনা করিলাম, যাতে করে দুনিয়ার মানুষেরা এই বিষয় ধারণা নিয়ে ইহলোক ও পরলোকের জন্য মঙ্গল সাধন করিতে পারে এবং উপকৃত হতে পারে। প্রথমে আমি এই শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে মানুষের জীবনের আয়ু বা পরম আয়ু ঘাটতি হইতে বৃদ্ধির দিকে নেওয়া যায়, সেই সম্মন্ধে অবগত করাইবার চেষ্টা করিবো। যাহারা জ্ঞানী ও সচেতন মানুষ, তাহারা আমার এই শ্বাস-প্রশ্বাসের তথ্য হইতে অনেক কিছু জানিয়া ও বুঝিয়া লাভবান এবং উপকৃত হইতে পারিবেন।
আল্লাহ্ পাক এই শ্বাস-প্রশ্বাসের দ্বারা প্রত্যেকটি প্রানী ও মানুষকে তার পরম আয়ু নির্ধারন করিয়া দিয়াছেন। উদাহরণ দ্বারা বুঝাইতে চেষ্টা করিতছি। মনে করুন, মানুষ একটি আগের দিনের চাবিওয়ালা ঘড়ির ন্যায়। আমরা দেখেছি ঐ ঘড়িটি একবার চাবি দিয়ে রাখলে বা ব্যবহার করিলে যতক্ষন ঐ ঘড়িটি চাবি অবস্থায় থাকে ততোক্ষণ ঘড়িটি টিক্ টিক্ টিক্ করিয়া চলিতে
থাকে। মনে করুন একবার চাবি দিলেই ২৪ ঘন্টা চলতে থাকে। কিন্তু চাবিটি শেষ হলেই ঘড়ি বন্ধ হয়ে যায়। আবার চাবি দিলে আবার চলতে শুরু করে। এই ভাবে দিনের পর দিন চাবি দিয়ে চালাইতে হয়। তেমন আমাদের মানবদেহ ও একটি চাবিওয়ালা ঘড়ির ন্যায়। দয়াময় আল্লাহ পাক আমাদের দেহ ঘড়িটিতে শ্বাস প্রশ্বাস নামক এক চাবি দিয়ে পাঠাইয়া দিয়েছেন এই দুনিয়াতে। যতদিন শ্বাস প্রশ্বাস নামক চাবিটি আছে ততদিন আমরা চাবিওয়ালা ঘড়ির ন্যায় টিক্ টিক্ টিক্ না বলে আর্মা আর্মা আর্মা বলে জীবন কাটাইতেছি। আর এই চলার নামই হচ্ছে জীবন। আর যেই দিন শ্বাস-প্রশ্বাস নামক চাবিটি শেষ হয়ে যাবে তাহার নাম মরণ, পার্থক্য হলো দুনিয়ার ব্যবহৃত ঘড়িটির মালিক যদি আবার চাবি দেয়, তবে ঘড়িটি আবার পুনরায় চলিতে থাকবে। আর আমাদের দেহরূপী ঘড়িটির মালিক স্বয়ং আল্লাহ্। মানবের দেহ ঘড়িটি দ্বিতীয় বার চাবি দেওয়ার কোনো ব্যবস্থা বা উপায় নাই। তবে উপায় একটি আছে, সেই উপায় দ্বারা কোনো কোনো যোগী, মনি, ঋষী, জ্ঞানীজন হাজার বছর এই দুনিয়াতে বেঁচে ছিলেন এবং এখনো অনেক আল্লাহ্র ফকির জ্ঞানীজন বেঁচে আছেন এবং বাঁচতেছেন।
শাস্ত্র মতে ২১ হাজার ৬০০ বার দিবা রাত্রি ২৪ ঘন্টাতে শ্বাস-প্রশ্বাস আসা যাওয়া করে। এই শ্বাস-প্রশ্বাসকে গুরুজ্ঞান অর্জন করিয়া যে যতটুকু কমিয়ে নিতে পারবে সে ততোটুকুই পরম আয়ু বাড়াইয়া নিতে পারবে। উহা শাস্ত্র সম্মত বুঝাইবার চেষ্টা করিতেছি। মানুষ যখন চুপচাপ বসিয়া থাকে তখন মানুষের প্রাণ বায়ু ১০ আঙ্গুল পরিমাণ ভিতরে প্রবেশ করিয়া আবার ১২ আঙ্গুল পরিমাণ বাহিরে বের হয়ে আসে। এখন বিয়োগ করিয়া দেখা গেলো ১২-১০=২ আঙ্গুল। অতএব, দেখা গেল প্রতি শ্বাস-প্রশ্বাসে প্রতিনিয়ত প্রত্যেক দমে দমে পরম আয়ু ঘাটতি হইতেছে ২ আঙ্গুল। এই জন্য আমাদের মৃত্যু অনিবার্য। তাহা হলে দেখা গেল চুপচাপ বসে থাকলে ২ আঙ্গুল ঘাটতি হইতেছে। কিন্তু মানুষতো চুপ চাপ বসে থাকতে পারে না। মানুষ একটি কর্মব্যস্ত জীব। হাটা-হাটি, চলা-ফেরা, ছুটা-ছুটি প্রত্যেকটি মানুষের স্বভাব। তারপর যৌবনে কামবানে জর্জরিত হইয়া কামবাসনা পূর্ণ করার জন্য নারীর সঙ্গম, তারপর দিনের ক্লান্তি দূর করার জন্য রাত্রি নিদ্রা। এবার তাহা হলে দেখা গেল আমাদের ইচ্ছা বা অনিচ্ছায় হোক না কেন আমাদের প্রাণ বায়ু প্রতিদিন প্রতি মুহুর্তে কি পরিমাণ পরম আয়ু ঘাটতি করিয়া আমরা সবাই মৃত্যুর দিকে কত দ্রুত ছুটে চলছি।
এখন আমরা শাস্ত্রে প্রবেশ করিয়া দেখি। কিভাবে আমরা তাড়াতাড়ি পরম আয়ু বিনাশ করিয়া মৃত্যুর দিকে ধাবিত হইতেছি। শাস্ত্রে প্রমাণ মানুষ যখন চুপ চাপ বসিয়া থাকে তখন প্রাণ বায়ু ভিতরে যার ১০ আঙ্গুল পরিমাণ এবং বাহিরে আসে ১২ আঙ্গুল পরিমাণ। এতে ২ আঙ্গুল পরিমাণ ঘাটতি প্রতি শ্বাস-প্রশ্বাসে। কি কি কার্যে আমাদের শ্বাস-প্রশ্বাস কি পরিমাণ ভিতরে এবং বাহিরে আসা যাওয়া করে তা নিচে উল্লেখ করিলাম...

*চুপ চাপ বসিয়া থাকিলে শ্বাস ১০ আঙ্গুল ভিতরে যায়, ১২ আঙ্গুল বাহিরে আসে।
*কথা বলা ও খাওয়ার সময় শ্বাস ১০ আঙ্গুল ভিতরে যায়, ১৮ আঙ্গুল বাহিরে আসে।
*ঘুরা-ফেরার ও হাঁটা-হাঁটির সময় শ্বাস ১০ আঙ্গুল ভিতরে যায়, ২৪ আঙ্গুল বাহিরে আসে।
*বড় কোন কাজ বা দৌড়াদোড়ির সময় শ্বাস ১০ আঙ্গুল ভিতরে যায়, ৩৬ আঙ্গুল বাহিরে আসে।
*রাত্রি নিদ্রা কালের সময় শ্বাস ১০ আঙ্গুল ভিতরে যায়, ৬৫ আঙ্গুল বাহিরে আসে।
*স্ত্রী সহবাস কালের সময় শ্বাস ১০ আঙ্গুল ভিতরে যায়, ১০০ আঙ্গুল বাহিরে আসে।
তাহলে দেখা যায় প্রত্যেক বার শ্বাস ভিতরে যায় মাত্র ১০ আঙ্গুল। এবার ভেবে দেখুন প্রতিনিয়ত আমাদের ইচ্ছায় হোক বা অনিচ্ছায় হোক কত দ্রুত আমাদের পরম আয়ু বিনাশ করিয়া মৃত্যুর দিকে ধাবিত হইতেছি। ভাবিলে অন্তর কেঁপে উঠে। আমার তথ্য মিথ্যা নয়। ইহা শাস্ত্রে প্রমাণ। তবে ভয়ের কিছু নাই। ইহা দুনিয়াকামী মানুষের অবস্থা। কিন্তু আল্লাহ্ প্রেমিক বান্দারা যদি একজন পূর্ণ আত্মজ্ঞানী কামেল মুর্শিদের চরণে গিয়া আত্মসমর্পন করিতে পারে, তবে দয়াল গুরু ভক্তকে দমের সাধন শিক্ষা দিয়া ভক্তের পরম আয়ু রক্ষা করার কৌশল বাতায়ে দিবেন। আর পরম আয়ু রক্ষা করা তেমন কঠিন সাধন নয়। গুরু কৃপা করিলে সব ভক্তই ইহা করিতে পারবে। ইনশাল্লাহ্।